এই রাস্তাই খুঁড়ে দিয়ে গিয়েছে সেনাবাহিনী। ব্যারাকপুরের আনন্দপুরী এলাকায়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
সকালে আচমকাই পাড়ায় সেনার গাড়ি ঢুকতে দেখে অনেকেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। খেলার মাঠের কাছে গাড়ি থামিয়ে স্টেনগান হাতে একে একে নেমে এসে পজিশনও নেয় তারা। তার পরেই কাজ শুরু করে সেটি। মাঠের পাশে রাস্তার বেশির ভাগটাই কুপিয়ে, খুঁড়ে চলে যায় সেনা।
ব্যারাকপুরের আনন্দপুরী এলাকায় ওই রাস্তা-সহ বেশ কিছুটা জমি সেনার। তাদের অভিযোগ, সেখানে অবৈধ নির্মাণ করা হয়েছে। তাই তা ভেঙে দেওয়া হল। রাস্তা ভাঙা ঠেকাতে পুরসভার চেয়ারম্যান-সহ অনেকেই এসেছিলেন কথা বলতে। কিন্তু সেনা কোনও কথাই শুনতে চায়নি। সেনার বক্তব্য, তাদের জমি অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না।
সেনাবাহিনীর ৮৯ একরের ওই জমিটি ব্যারাকপুর পুরসভার মধ্যে। জমির চার দিকেই রয়েছে লোকালয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, জমিটি পড়ে থাকায় বছরের পর বছর ধরে সেখানে কচিকাঁচারা খেলাধুলো করে। ওই জমির এক দিকের অংশ এখন আনন্দপুরী খেলার মাঠ হিসেবেই চিহ্নিত। শুধু খেলার মাঠই নয়, সেটি এলাকার ফুসফুসও বটে। কিন্তু সেনাবাহিনী ব্যবহার না করায় সাধারণ মানুষই এত দিন জমিটি ব্যবহার করে এসেছেন। খেলা থেকে রাজনৈতিক অনুষ্ঠান, সবই হয়ে এসেছে সেখানে। ওই মাঠে সভা করেছেন জ্যোতি বসু থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জমির মালিকানা বজায় রাখতে সম্প্রতি সেনাবাহিনী এলাকায় ঢুকে যে ভাবে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাল, তাতে এলাকার মানুষ যথেষ্ট ক্ষুব্ধ এবং চিন্তিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, জমি সেনার হতেই পারে। কিন্তু আনন্দপুরী তো উপদ্রুত এলাকা নয়। এ ভাবে মানুষকে সন্ত্রস্ত করতে হবে কেন?
ব্যারাকপুরের মহকুমা শাসক পীযূষ গোস্বামী বলেন, ‘‘সেনা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানায়নি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সেনার উচিত ছিল আমাদের জানানো।’’ ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান উত্তম দাস বলেন, ‘‘ওরা কারও কথাই শুনতে চায়নি। আমিও বলেছিলাম, কিন্তু শোনেনি।’’
স্থানীয়দের অভিযোগ, জমিটি পড়ে থাকায় রাতে সেখানে অসামাজিক কাজও হয়। তাঁরা চান, ফেলে না রেখে সেনা সেখানে পরিবেশবান্ধব কোনও প্রকল্প করুক। বা জমিটি পুরসভাকে দিয়ে দিক। নইলে জমিটি নিয়ে অশান্তি লেগেই থাকবে। এলাকার প্রাক্তন সাংসদ তড়িৎবরণ তোপদারও বলেন, ‘‘মানুষের স্বার্থে জমিটি সেনার ছেড়ে দেওয়াই উচিত।’’ বাসিন্দাদের বক্তব্য, সেনা ছাউনি থেকে এই মাঠ বহু দূরে। তা ছাড়া, জমিটি লোকালয়ের মধ্যে। ফলে সেখানে কিছু করতে গেলে সেনা কর্তৃপক্ষকে লোকালয়ের কথা ভাবতেই হবে।