ক্যানিঙে হেলমেট পরে বাইক চালানোর জন্য শুরু হল সচেতনতা কর্মসূচি। —নিজস্ব চিত্র।
ক্যানিঙের একটি পেট্রোল পাম্পে হেলমেট ছাড়া তেল নিতে এসেছিলেন এক যুবক। তখন সেখানে নজরদারি চালাচ্ছে পুলিশ। পাম্পের কর্মীরা শত অনুরোধেও তেল দিলেন না। সেখান থেকে বেরিয়ে যুবক কাছেই এক গ্যারেজে গিয়ে বললেন, ‘‘দাদা একটা হেলমেট পাওয়া যাবে?’’ মিলল হেলমেট। স্রেফ ১০ টাকার বিনিময়ে। সেই হেলমেট মাথায় চাপিয়ে তেল নিয়ে বেরিয়ে আসতে আসতে তখন যুবকের মুখে যুদ্ধজয়ের হাসি।
‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’— নীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এমনই নানা ফন্দিফিকির খুঁজে নিচ্ছে মানুষজন। ক্যানিং মহকুমার বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে বিনা হেলমেটেও পেট্রোল দেওয়া হচ্ছে, এই খবর আনন্দবাজারে প্রকাশিত হওয়ার পরে নড়েচড়ে বসে পুলিশ-প্রশাসন। নজরদারি শুরু হয়েছে পাম্পে। কিন্তু হেলমেট ভাড়া নেওয়ার মতো এমন নানা কীর্তিকলাপ কী ভাবে বন্ধ করা যাবে, তা চিন্তায় ফেলেছে দফতরের কর্তাদের।
একটি পাম্পে গিয়ে দেখা গেল, ক্যানিং থানার এসআই লিটন হালদার পাম্পের মালিক, ম্যানেজার ও কর্মীদের বলছেন, কোনও ভাবেই যেন হেলমেট ছাড়া কাউকে তেল দেওয়া না হয়। হেলমেট ছাড়া যাঁরা পেট্রোল নিতে আসছেন, তাদেরও পুলিশ কর্মীটি বোঝাচ্ছেন, নিজের জীবন সুরক্ষিত করতেই হেলমেট ব্যবহার করুন। সরকার ও প্রশাসন চায় আপনার জীবন সুরক্ষিত থাকুক।
কিন্তু বললেই সে সব কথা কানে ঢুকছে ক’জনের। সামনে ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিকই তো ঠিকই তো’ করে বেরিয়ে গিয়ে ফের একই কাণ্ড ঘটাচ্ছেন তাঁরা।
ক্যানিঙের এক পাম্প কর্মী বললেন, ‘‘হেলমেট ছাড়া তেল দিতে না চাইলে আমাদের প্রচণ্ড গালাগালি শুনতে হচ্ছে। নানা রকমের চোটপাট চলছে। মারব, দেখে নেব— এ সবও শুনতে হচ্ছে।’’ তবে এ বার পুলিশের নজরদারি থাকায় কিছুটা সুবিধা হচ্ছে বলে জানালেন তিনি।
পাম্পগুলিতে যদি বা বিনা হেলমেটে তেল দেওয়া বন্ধ করা গিয়েছে, রাস্তাঘাটে অবশ্য বিনা হেলমেটে এখনও চোখে পড়ছে অনেককেই। আর তারই মধ্যে তেল ভরার জন্য হেলমেট ভাড়া দিয়ে দু’পয়সা কামিয়ে নিচ্ছ কেউ কেউ।
ক্যানিঙের এক গ্যারেজ মালিক বলেন, ‘‘পাম্পগুলি হেলমেট ছাড়া তেল দিচ্ছে না। তার উপরে চলছে পুলিশের নজরদারি। অনেকে পাম্পে তেল নিতে গিয়ে হেলমেট না থাকায় সমস্যায় পড়ছেন। তাঁদের যদি হেলমেট ভাড়া দিয়ে উপকার করি, তাতে ক্ষতি কী? বরং এই সুযোগে আমাদেরও কিছু উপরি আয় হচ্ছে।’’
এসডিপিও সৌম্য রায় জানালেন, সব সময়ে সব পাম্পে পুলিশের নজরদারি চালানো সম্ভব নয়। পাম্পগুলির উচিত, সরকারি নিয়মকে মান্যতা দেওয়া। আবার মানুষকেও সচেতন হতে হবে নিজের সুরক্ষার কথা ভেবেই। বাইক চালাতে গেলে অবশ্যই হেলমেট পরা উচিত, এই সহজ কথাটা আর কী ভাবে বোঝানো যাবে!