বিপর্যয়: মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। —ফাইল চিত্র
রাস্তা ভাল হওয়ায় বেপরোয়া গতিতে ছুটছে গাড়ি। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। মৃত্যুও হয়েছে।
হাসনাবাদের বনবিবি সেতু থেকে হিঙ্গলগঞ্জ কালীবাড়ি পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার পিচের রাস্তা এখন ঝকঝকে। আগে ছিল ভাঙাচোরা। কয়েক মাস হল সংস্কার ও সম্প্রসারণ হয়েছে। রাস্তা যখন খারাপ ছিল, দুর্ভোগে পড়তে হত মানুষকে। ভাল হওয়ার পরে আবার নতুন বিড়ম্বনা!
রাস্তা সংস্কার হওয়ার পর পরই হিঙ্গলগঞ্জ থানার উত্তর মামুদপুর গ্রামে এতিমখানার পাশে সকালবেলায় একটি পিক আপ ভ্যান ধাক্কা মারে বাইক চালককে। ঘটনাস্থলেই মারা যান স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল মণ্ডল। ক্ষুব্ধ মানুষজন দীর্ঘক্ষণ পথ অবরোধ করেন।
২৮ নভেম্বর ভোরবেলায় হিঙ্গলগঞ্জের সামসেরনগরে মুখ্যমন্ত্রীর সভার জন্য একটি পিক আপ ভ্যান সাউন্ড বক্স নিয়ে যাচ্ছিল। হিঙ্গলগঞ্জ থানার ঘোষপাড়া মোড়ের কাছে একটি বাঁক আছে। সেখানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের একটি ডোবায় উল্টে পড়ে গাড়িটি। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত গতিতে যেতে গিয়েই বিপত্তি।
ঘোষপাড়া মোড়ের বাঁকের কাছে বিপরীত দিক থেকে গ্যাস সিলিন্ডার ভর্তি ইঞ্জিন ভ্যান চলে আসায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি এবং ইঞ্জিন ভ্যান রাস্তার পাশের ডোবায় পড়ে যায়। ইঞ্জিন ভ্যানটিও দ্রুত গতিতে যাচ্ছিল বলে দাবি স্থানীয়দের।
একই জায়গায় ২৯ তারিখ দুপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থলে দ্রুত কম্বল নিয়ে যেতে গিয়ে হাসনাবাদ থেকে আসা একটি কম্বলের গাড়ি রাস্তার পাশে বড় একটা জলের ভ্যাটে ধাক্কা মেরে উল্টে যায়। কংক্রিটের ভ্যাটটি সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কম্বলের গাড়িটিও দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
৭ ডিসেম্বর প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে তাহাজুল গাজি নামে স্থানীয় এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয় হাসনাবাদ কর্মতীর্থ সামনে। দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। যা দেখে পুলিশের অনুমান, কোনও গাড়ি দ্রুতগতিতে তাঁকে পিষে দিয়ে পালায়।
২৩ ডিসেম্বর রাতে হিঙ্গলগঞ্জ থানার নারকেলতলায় রাস্তার পাশে থাকা একটি কংক্রিটের দোকান গুঁড়িয়ে দেয় একটি পিক আপ ভ্যান। গাড়িটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চালক পালিয়ে যায়। চালক মদ্যপ ছিল বলে সন্দেহ পুলিশের।
হিঙ্গলগঞ্জ থানার এক সিভিক ভলান্টিয়ারের স্ত্রী হালিমা খাতুন বলেন, ‘‘৫ সেপ্টেম্বর রাতে বিশ নম্বর মোড়ের কাছে আমার স্বামী কর্তব্যরত ছিলেন। একটি বাইক দ্রুত গতিতে এসে তাঁকে ধাক্কা মারে। দেড় মাস শয্যাশায়ী ছিলেন স্বামী। এই রাস্তা দিয়ে বিশেষ করে রাতে দুরন্ত গতিতে গাড়ি বাইক ছুটে চলে। দেখলে শিউরে উঠতে হয়। এ সব নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।’’
হিঙ্গলগঞ্জের ঘোষপাড়া বাসিন্দা সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘ঘোষপাড়ায় যে বাঁকের কাছে দুর্ঘটনা হচ্ছে, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা দরকার। রাতে রাস্তায় পুলিশের নজরদারি দরকার।’’
এই ১৫ কিলোমিটার রাস্তার কোথাও কোথাও আলো থাকলেও বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার পাশে কোনও আলো নেই। এই রাস্তা দিয়ে পর্যটকেরা সুন্দরবন যান। অনেকে হাসনাবাদের বনবিবি সেতু হয়ে এই পথে হিঙ্গলগঞ্জে আসেন। কিন্তু নজরদারির জন্য সিসিটিভি নেই সেতুতে।
হাসনাবাদের আইসি কৃষ্ণেন্দু ঘোষ বলেন, ‘‘রাতে এই রাস্তায় আমাদের সীমানার মধ্যে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। নাকা চেকিং চলছে রাত-দিন। গাড়ি চালকেরা মত্ত অবস্থায় আছেন কি না, তা-ও পরীক্ষা করা হয়।’’
বেপরোয়া গতির জেরে দুর্ঘটনা বেড়েছে, তা মেনে নিয়ে হিঙ্গলগঞ্জ থানার ওসি অনিল সাউ জানান, নাকা চেকিংয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে চালক-পথচারীদের সচেতন করা হচ্ছে।’’