রামচন্দ্র দাস। নিজস্ব চিত্র
দিন কয়েক আগে ফিরেছেন হাসপাতাল থেকে। শরীর এখনও অশক্ত। তবে ১৮ অগস্ট বনগাঁর স্বাধীনতা দিবসের প্রসঙ্গ উঠলে এখনও চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে বৃদ্ধ রামচন্দ্র দাসের। বলেন, ‘‘স্বাধীন দেশে প্রথম পতাকা তোলার জন্য বেদি বানিয়েছিলাম নিজের হাতে। সে কথা ভাবলে এখনও রোমাঞ্চ হয়।’’
বর্তমানে নদিয়ার কল্যাণীতে সগুনা গ্রামে থাকেন রামচন্দ্র। জানালেন, ১৯৪৭ সালের আগে বাবা-মায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের চন্দ্রপুরা থেকে এসে উঠেছিলেন বনগাঁর মনমোহনপুর গ্রামে। তখন বয়স বারো বছর। কাজ পেলেন বনগাঁয় এসডিও অফিসে ‘পাঙ্খাপুলার’ হিসেবে। কাজ ছিল, হাতে টানা পাখা দিয়ে সাহেব-সুবোদের হাওয়া করা খাটা। থাকা, খাওয়া-সহ বেতন মাসে ৭ টাকা। তবে সাহেবরা খুশি হলে মিলত বখশিস।
ইতিহাস বলছে, ১৯৪৭ সালের ১২ অগস্ট ঘোষণা করা হয়েছিল, ১৫ অগস্ট স্বাধীন ঘোষণা করা হবে ভারতকে। তখন বনগাঁকে যশোর জেলার অংশ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তৎকালীন ব্রিটিশ আধিকারিক সিরিল র্যাডক্লিফের তৈরি ভারতের মানচিত্রে বাংলার কিছু হিন্দু অধ্যুষিত জায়গা বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।
বিরোধিতার মুখে পড়ে ব্রিটিশ সরকার। ঘটনার জেরে ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল মাউন্টব্যাটেন নতুন করে মানচিত্র তৈরির পরামর্শ দেন। বিষয়টি সম্পন্ন হয় ১৭ অগস্ট রাতে। সেই রাতেই রেডিয়োর ঘোষণার মাধ্যমে দেশবাসী জানতে পারেন, বনগাঁকে ভারতের ২৪ পরগনা জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ১৮ অগস্ট বনগাঁয় স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়।
কেমন ছিল সে দিনের অভিজ্ঞতা?
রামচন্দ্র জানান, সে দিন সকালটা ছিল অন্য রকম। ঠিক হয়, বনগাঁর আদালত চত্বরে পতাকা উত্তোলন করা হবে। বৃদ্ধের কথায়, ‘‘আমাকে বলা হয়েছিল, পতাকার জন্য বেদি তৈরি করতে। আমি ইট সাজিয়ে কাদামাটি লেপে বেদি তৈরি করেছিলাম। সেখানেই উড়েছিল স্বাধীন বনগাঁর প্রথম জাতীয় পতাকা।’’
রামচন্দ্র বলেন, ‘‘জীবনে অনেক উত্থানপতন দেখেছি। এখন ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিকে নিয়ে ভরা সংসার আমার। তবে ওই দিনের সেই স্মৃতি আজও আমার মনে অমলিন।’’