মোবাইল কানে পারাপার, দুর্ঘটনা

কয়েক মাস আগে শিয়ালদহ শাখার দুর্গানগর স্টেশনে মোবাইল কানে রেললাইনের ধারে কথা বলার সময়ে এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২৯
Share:

বিপজ্জনক: এ ভাবেই পারাপার! ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

কিছুক্ষণ পরপরই মাইকে ঘোষণা চলছে। তা সত্ত্বেও হেলদোল নেই। ট্রেন আসছে-যাচ্ছে। তার মধ্যেই কানে মোবাইল কিংবা ইয়ার পিস লাগিয়ে কথা বলতে বলতে লাইন পারাপার করছেন কিছু যাত্রী।

Advertisement

কয়েক মাস আগে শিয়ালদহ শাখার দুর্গানগর স্টেশনে মোবাইল কানে রেললাইনের ধারে কথা বলার সময়ে এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। যাকে কেন্দ্র করে ট্রেন অবরোধ, তুলকালাম কাণ্ড ঘটে। তার পরে-পরেই বারাসত ও বামনগাছি স্টেশনের মধ্যে মোবাইল কানে রেললাইন পার হতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান এক কলেজ ছাত্রী। কিন্তু তারপরেও হুঁশ ফিরছে না অনেকের। মোবাইল কানে পারাপার চলছেই। রেলের বক্তব্য, একদিকে স্টেশনে প্রচার সত্ত্বেও মোবাইল কানে প্ল্যাটফর্মে ওঠানামার সময়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। অন্য দিকে, দু’টি স্টেশনের মাঝখানে যেখান দিয়ে রেললাইন গিয়েছে, সে সব ফাঁকা জায়গাতেও একই ঘটনা ঘটছে। যেমন হয়েছে বারাসত-বামনগাছির ক্ষেত্রে।

এই সব কারণে প্রতিদিন গড়ে ৬টি ট্রেনে ধাক্কা বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছে পূর্ব রেল। ওই শাখার মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘স্টেশনে স্টেশনে ঘন ঘন প্রচার, নানা ভাবে সতর্ক, ধরপাকড় করেও মোবাইল কানে লাইন পারাপারের প্রবণতা কমানো যাচ্ছে না। মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে।’’

Advertisement

রেল সূত্রে খবর, এই সব পদক্ষেপ নেওয়ার পরে হাওড়া শাখায় কিছুটা কমেছে। শিয়ালদহ শাখাতেও কমবে বলে আশা। রবিবাবু বলেন, ‘‘এটা আসলে সামাজিক সমস্যা। সামান্য অসতর্কতার জন্য মূল্যবান জীবন যে চলে যাচ্ছে, সে হুঁশ থাকছে না অনেকের।’’

রেলের পরিসংখ্যান বলছে, শিয়ালদহের মতো যে সব স্টেশন পাচিলে ঘেরা, বাইরে থেকে ঢোকার উপায় নেই, সে সব স্টেশনে এমন ঘটনা হচ্ছে কম। কিন্তু বেশিরভাগ স্টেশনেই এমন ব্যবস্থা নেই। ফাঁকা জায়গা বা রাস্তা থেকে সরাসরি প্ল্যাটর্ফমে উঠে পড়া যায় এমন স্টেশনেই এ রকম ঘটনা বেশি হচ্ছে। যেমন দেখা গেল, দমদম জংশন স্টেশনে। ৫ নম্বর প্ল্যটফর্ম থেকে রেল লাইনের উপর দিয়ে কানে মোবাইল নিয়ে যাতায়াত করছিলেন কিছু মানুষ। বারাসত স্টেশনে এক ঘণ্টার মধ্যে দেখা গেল, প্রায় ৩০ জন কানে মোবাইল, ইয়ার পিস ঠেসে কথা বলতে বলতে প্ল্যাটফর্মে উঠছেন।

কেন এমন করছেন, প্রশ্ন শুনে এক কলেজ ছাত্র কান থেকে ইয়ার পিস খুলে কাঁধ ঝাঁকিয়ে অবাক হয়ে নির্বিকার ভাবে চলে গেলেন। দেখা গেল, মোবাইলে কথা বলার পাশাপাশি মেসেজ বা হোয়াটস অ্যাপে টাইপ করতে করতে অনেকে লাইন পার করছেন। ফোনের থেকেও মাথা ঝুঁকিয়ে নিবিষ্ট মনে মেসেজ, হোয়াটস অ্যাপ করা এ ক্ষেত্রে আরও ঝুঁকির।

শুধু প্রচারে এই প্রবণতা রুখতে না পেরে জেল-জরিমানা চালু করেছে রেল। মোবাইলে কথা বলতে বলতে লাইন পারাপার করলে ২ হাজার টাকা জরিমানা, ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের নির্দেশও রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কমছে না এই প্রবণতা। এ ব্যাপারে রেল পুলিশের নজরদারির অভাবকেও দায়ী করেছেন যাত্রীরা।

অনেক যাত্রীর মতে, এ সব ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনটি বাজেয়াপ্ত করলে অনেকের টনক নড়বে। অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এক সময়ে প্রচার, জরিমানা করেও মোবাইল কানে মোটরবাইক বা গাড়ি চালানোর প্রবণতা বন্ধ করতে পারছিল না উত্তর ২৪ পরগনা ট্রাফিক পুলিশ। এরপরে মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা শুরু হয়। আদালত থেকে ২-৪ মাস পরে বাজেয়াপ্ত মোবাইল ছাড়ানোর ঝক্কির ভয়ে সেই প্রবণতা অনেকটা কমেছে বলে জানিয়েছে পুলিশও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement