Road Accident

দুর্ঘটনায় মৃত্যু, দেহ আটকে ক্ষোভ 

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত বৃদ্ধার নাম সীতারানি দাস (৭৪)। তাঁর বাড়ি স্থানীয় চামড়াকুঠি এলাকায়। পুলিশ ট্রাক আটক করেছে। চালক পলাতক। তার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২৪ ০৮:০০
Share:

(বাঁ দিকে) ঘটনাস্থলের অদূরে কাঠের বেঞ্চ যশোর রোড আটকিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। এই ঘরে ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতা (ডান দিকে)। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হল এক বৃদ্ধার। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ শহরে বিএসএফ ক্যাম্প এলাকায়, যশোর রোড এবং বনগাঁ-চাকদহ সড়কের সংযোগস্থলে। দুর্ঘটনার পরে উত্তেজিত বাসিন্দারা পুলিশকে দেহ তুলতে বাধা দেন। ক্ষুব্ধ মানুষের ভিড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাশেই আইএনটিটিইউসি লেখা একটি ঘরে জনতা ভাঙচুর চালায়। পুলিশ গার্ডরেল দিয়ে এলাকা ঘিরে রাখে। ঘটনাস্থলে আসেন বনগাঁ থানার আইসি শিবু ঘোষ, বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা কাউন্সিলর দেবদাস মণ্ডল, পুরপ্রধান গোপাল শেঠ। পরে আসেন বনগাঁর তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস। পুরপ্রধানের সামনে এলাকার মানুষ ক্ষোভ জানান।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত বৃদ্ধার নাম সীতারানি দাস (৭৪)। তাঁর বাড়ি স্থানীয় চামড়াকুঠি এলাকায়। পুলিশ ট্রাক আটক করেছে। চালক পলাতক। তার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।

আর কত মৃত্যু হলে পুলিশ-প্রশাসনের হুঁশ ফিরবে, সে প্রশ্ন তোলেন বাসিন্দারা। দিনের বেলায় শহরে ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণের দাবি ওঠে। যশোর রোড সম্প্রসারণেরও দাবি তোলা হয়েছে। পাশাপাশি, ওই এলাকায় যশোর রোডের পাশে থাকা একটি নির্মাণ সৌধ সরানোর দাবি তুলেছেন তাঁরা।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, বনগাঁ শহরে পথে বেরিয়ে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু বা জখমের ঘটনায় প্রায়ই ঘটছে। কিছু দিন আগে ওই এলাকায় ট্রাকের চাকায় পিষে মৃত্যু হয়েছিল এক মহিলা ও তাঁর পাঁচ বছরের ছেলের। জানুয়ারি মাসে যশোর রোডে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল আর এক মহিলার। গুরুতর জখম হয়েছিলেন তাঁর স্বামী।

পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে স্থলপথে বাংলাদেশের সঙ্গে পণ্য রফতানির কারণে শ’য়ে শ’য়ে ট্রাক রোজ বনগাঁ শহর দিয়ে যাতায়াত করে। শহরবাসীর দাবি, কার্যত প্রাণ হাতে নিয়ে পথে বেরোতে হয়। এমনিতেই সঙ্কীর্ণ রাস্তার কারণে শহরে পথচলা দায়। তার উপরে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে শহরে ২৪ ঘণ্টা ট্রাক চলে। অথচ, কয়েক বছর আগেও শহরে ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রিত ছিল। ২০২০ সালে শহরে একটি বড়সড় দুর্ঘটনার পরে ট্রাক নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ করে বনগাঁ জেলা পুলিশ। ওই সময়ে দিনের বেলায় শহরে ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে সড়কগুলিতে অস্থায়ী ‘ড্রপ গেট’ তৈরি করা হয়েছিল। বাইরে থেকে কোনও ট্রাক শহরে ঢুকতে গেলে তা আটকে দেওয়া হত। শহরে ঢোকার পাঁচটি জায়গায় (যশোর রোডে দু’টি, রামনগর রোড, বাগদা ও চাকদা রোডে একটি করে) ‘ড্রপ গেট’ করা হয়েছিল। যানজট এবং দুর্ঘটনা কমাতে পুলিশ-প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সকাল ৭টা থেকে ১২টা এবং দুপুর ২টো থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শহরে ট্রাক ও ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। দুপুর ১২টা থেকে ২টো পর্যন্ত চলবে ট্রাক।

কিছু দিন সব ঠিকঠাক চললেও বর্তমানে সব বিধিনিষেধ উঠে গিয়েছে বলেই অভিযোগ। বাসিন্দাদের অনেকের বক্তব্য, পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই বিধিনিষেধ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। আরও অভিযোগ, সঙ্কীর্ণ রাস্তায় দুর্ঘটনার আরও একটি বড় কারণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য বিনা অনুমতিতে অবৈধ ভাবে তৈরি অস্থায়ী তোরণ। যা অনুষ্ঠানের পরেও দীর্ঘ দিন থেকে যায়। এখনও শহরে পুরনো কিছু তোরণ রয়ে গিয়েছে বলে জানান এলাকার মানুষ।

মৃত বৃদ্ধার ছেলে ভগীরথ বলেন, “সমস্যার সমাধান করতেই হবে। আর যেন কোনও ছেলে মা-হারা না হয়।” পরে দেবদাসের অনুরোধে উত্তেজিত জনতা পুলিশকে দেহ তুলে দিতে সম্মতি দেন। পুরপ্রধান পৌঁছতেই মহিলারা ওই এলাকায় থাকা একটি সৌধ সরিয়ে দেওয়ার দাবি করেন। পরে পুরসভার পক্ষ থেকে সৌধটি সরানোর ব্যবস্থা করা হয়।

দেবদাস বলেন, “বিএসএফ ক্যাম্প মোড় এলাকায় যাঁরা যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকেন, তাঁরা সেই কাজের চেয়ে ট্রাক চালকদের কাছ থেকে টাকা তুলতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। তা ছাড়া, শহরে আসা ট্রাকে অনেক ক্ষেত্রেই খালাসি থাকেন না। চালকেরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় চালান। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে।” পুরপ্রধানের কথায়, “শহরে ট্রাক নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ-প্রশাসন ও পরিবহণ দফতরে অনেক আগেই চিঠি দিয়েছি। রোজ রাতে বাণিজ্যের জন্য ট্রাকের স্লট বুকিংয়ের নম্বর পরিবহণ দফতরের কাছে আসার আগেই বিএসএফ ক্যাম্প মোড়ের কাছে ট্রাকের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। সাধারণ মানুষের যাতায়াতে অসুবিধা হয়। এটা করা যাবে না।”

পুলিশ জানিয়েছে, দিনের বেলায় শহরে ট্রাক চলাচল ইতিমধ্যেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এ দিনের দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখে আরও কিছু পদক্ষেপ করা যায় কি না, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে। টাকা তোলার অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কিন্তু আইএনটিটিইউসি লেখা ঘরে হামলা হল কেন? বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই ঘরে বসেই তোলাবাজি করা হয়। যাঁরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেন, তাঁরা ওই ঘরে বসে থাকেন। সে কারণে ঘরটির উপরে জনরোষ ছিল। চেয়ার-টেবিল ভাঙা হয়েছে। গোপাল বলেন, "আইএনটিটিইউসি লেখা থাকলেও ঘরটি এখন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন ব্যবহার করে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement