মঙ্গলবার দুপুরে বনগাঁ ত্রিকোণ পার্ক এলাকায় জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখাল কয়েকটি স্কুলের পড়ুয়ারা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
আর জি কর কাণ্ডে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ অব্যাহত। মঙ্গলবারও দুই জেলায় পথে নামেন বহু মানুষ। বিভিন্ন এলাকায় স্কুল পড়ুয়াদের স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে প্রতিবাদ মিছিল করতে দেখা যায়।
এ দিন সকালে পথে নামে বনগাঁ শহরের স্কুলের পড়ুয়ারা। এ দিন নীলদর্পণ অডিটোরিয়ামের সামনে মিছিল করে এসে জড়ো হয় বনগাঁ হাই স্কুল, শক্তিগড় হাই স্কুল, কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় সহ আরও কয়েকটি স্কুলের ছেলেমেয়েরা। সেখানে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। চিকিৎসকের খুনের ঘটনায় বিচার চেয়ে স্লোগান দেওয়া হয়। গাইঘাটার বকচরা এলাকায় স্কুল পড়ুয়ারা দোষীদের বিচার পেয়ে প্রতিবাদ মিছিল করে।
হাসনাবাদের কুমারপুকুর হাই স্কুলের কয়েকশো পড়ুয়া মঙ্গলবার সকালে মিছিল করে। স্কুলের গেট থেকে শুরু হয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ জুড়ে মিছিল হয়। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মৃণালকান্তি সর্দার বলেন, “ছাত্র ছাত্রীরা উদ্যোগ নিয়ে মিছিল করেছে। এটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। মিছিল শেষে স্কুলও হয়েছে।”
পথে নামে ভাঙড়ের পোলেরহাট হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। মঙ্গলবার তারা স্কুলপ্রাঙ্গণ থেকে শ্যামনগর মোড় পর্যন্ত মিছিল করে। স্কুলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ দিন দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের উদ্যোগে পথে নামে। এর আগে ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে শোকজ্ঞাপন করেছিলেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ সরকার বলেন, “আমাদের স্কুলের ছেলেমেয়েরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পথে নেমেছিল।”
ক্যানিংয়ের বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়ারা এ দিন সকালে ক্যানিং হাসপাতাল মোড়ে মিলিত হয়ে পোস্টার, প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল শুরু করে। হেলিকপ্টার মোড় পর্যন্ত বৃষ্টির মধ্যেই মিছিল করে তারা। কুলতলি ব্লকের প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের তরফে এ দিন ব্লক দফতর থেকে গ্রামীণ হাসপাতাল পর্যন্ত মৌনী মিছিল হয়। কুলতলি ব্লকে গ্রামীণ চিকিৎসকেরাও জামতলা বাজার থেকে গ্রামীণ হাসপাতাল পর্যন্ত মৌনী মিছিল করেন।
এ দিন বিকেলে নীলদর্পণ অডিটোরিয়ামের সামনে বনগাঁ মহকুমার চিত্রশিল্পী, ভাস্করেরা ছবি এঁকে আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ জানান। এ দিন বিকেলে হাবড়ার বাণীপুর এলাকা থেকে যুবক-যুবতীদের উদ্যোগে একটি মিছিল করা হয়। রাত ৯টায় গোবরডাঙায় নাগরিকদের তরফে স্টেশনে প্রতিবাদ মিছিল করা হয়।
ভাঙড় ১ ব্লকের আইসিডিএস ওয়াকার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে নলমুড়ি থেকে ঘটকপুকুর চৌমাথা পর্যন্ত মিছিল হয়। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও ছাতা মাথায় দিয়ে মিছিলে হাঁটতে দেখা যায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের। তাঁদের মধ্যে নিলুফার ইয়াসমিন, কৃষ্ণা দাসেরা বলেন, “মেয়েদের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। আমরা চাই আর জি কর কাণ্ডের প্রকৃত দোষীদের শাস্তি হোক।”
এ দিকে, আর জি কর কাণ্ডে দোষীদের শাস্তির দাবিতে মিছিল করে বিপাকে পড়েছেন বাগদা ব্লকের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। কর্মীরা জানান, গত ১৬ অগস্ট তাঁরা বাগদার হেলেঞ্চার ত্রিকোণ পার্ক থেকে একটি মিছিল করেছিলেন দোষীদের শাস্তির দাবিতে। অভিযোগ, সে সময়ে বাগদার সিডিপিও অফিস থেকে তাদের ফোন করে মিছিল বন্ধ করতে বলা হয়। মঙ্গলবার তাঁদের অফিসে ডেকে পাঠানো হয়। কাজের সময়ে মিছিল করতে বারণ করা হয়। তবে মহিলারা জানান, তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে কুলতলিতে মিছিল ও অবরোধ করে সিপিএম। এ দিন জামতলা বিদ্যুৎ অফিস থেকে জামতলা বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত মিছিল করে তারা। পরে বাস স্ট্যান্ডে রাস্তা অবরোধ করে। বারুইপুরেও পদ্মপুকুর থেকে মহকুমা হাসপাতাল পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করে সিপিএম।
আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে এ দিন বিকেলে কল্যাণগড় বাজার থেকে তৃণমূলের প্রতিবাদ মিছিল বেরোয়। নেতৃত্ব ছিলেন অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী। শহরের রাস্তা ধরে এসে মিছিল শেষ হয় চৌরঙ্গী মোড়ে।