Kolkata Doctor Rape and Murder

প্রতিবাদ জারি পুজোতেও

পুজোর চার দিনই নাগরিক সমাজের তরফে বনগাঁ শহরে যশোর রোডের পাশে স্টল ছিল। প্রতিটি অবিচারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে প্রতিবাদের আওয়াজ তোলা হয়।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:২৮
Share:

আরজিকর কাণ্ডের বিচার চেয়ে প্রতীকী অনশন নহাটায়।

আর জি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসককে খুন-ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদের আবহে এ বার পুজো ছিল। বনগাঁ মহকুমাতেও পুজোর দিনগুলিতে অব্যাহত রইল প্রতিবাদ। মণ্ডপে মণ্ডপে ঠাকুর দেখার ভিড় ছিল না, এমন নয়। কিন্তু সমান তালে এখানেও চলেছে প্রতিবাদ কর্মসূচি।

Advertisement

অষ্টমীর সকাল থেকে গোপালনগরের ন’হাটা বাজার এলাকায় মঞ্চ করে ১২ ঘণ্টার প্রতীকী অনশনে বসেন গোপালনগরের ছ’জন বাসিন্দা। সকলেই বাপমন্থী রাজনীতিতে বিশ্বাসী। উল্টো দিকেই ছিল মণ্ডপ। অনশনে বসা ছ’জনের মধ্যে কেউ কলেজের শিক্ষাকর্মী, কেউ কৃষক বা অন্য পেশার। তাঁদের মধ্যে প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘রাজ্যের নানা প্রান্তে খুন-ধর্ষণের ঘটনা লেগেই রয়েছে। আমরা চাই, এ সব বন্ধ হোক এবং প্রতিটি ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। এ বার অনশনই আমাদের উৎসব।’’ মঞ্চে গান, কবিতাও হয়।

পুজোর চার দিনই নাগরিক সমাজের তরফে বনগাঁ শহরে যশোর রোডের পাশে স্টল ছিল। প্রতিটি অবিচারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে প্রতিবাদের আওয়াজ তোলা হয়। ব্যানারে লেখা ছিল, ‘চারপাশে আজ বাজছে ঢাক, আমার দুর্গার বিচার চাই।’ যথার্থ বিচারের দাবিতে রবিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৮ জন মহিলা-পুরুষ অনশন করেন। সাধারণ মানুষ তাঁদের কাছে গিয়ে পাশে থাকার বার্তা দেন। যশোর রোডের পাশে সিপিএমের বইয়ের স্টলটিকে এ বার সাজানো হয়েছিল ‘প্রতিবাদের ভাষা’ হিসেবে। ব্যানারে লেখা ছিল, ‘তিলোত্তমা ভেবো না, সেটিং হতে দেব না’। সিপিএমের বনগাঁ এরিয়া কমিটির সদস্য পীযূষকান্তি সাহা বলেন, ‘আর জি কর হাসপাতালের ঘটনার প্রতিবাদে এবং বিচারের দাবিতে আমরা ষষ্ঠীতে ছ’মিনিট, সপ্তমীতে সাত মিনিট, অষ্টমীতে আট মিনিট, নবমীতে ন’মিনিট এবং দশমীতে দশ মিনিট আলো বন্ধ রেখে নীরবতা পালন করেছি।’’ গাইঘাটা থানার মোড় এলাকাতেও সিপিএমের পক্ষ থেকে একই রকম বইয়ের স্টল করা হয়েছিল। সেখানে এসেছিলেন প্রবীণ সিপিএম নেতা বিমান বসু।

Advertisement

বনগাঁর ঐক্য সম্মেলনী ক্লাব এ বার ছোট মণ্ডপ করে পুজো করেছে। ক্লাবের কর্তা দেবদাস মণ্ডল জানান, আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে তাঁরা পুজোর আড়ম্বর থেকে বিরত ছিলেন। তাঁরা উৎসবে ফেরেননি। শহরের আরও কয়েকটি পুজোতে নিহত তরুণী চিকিৎসকের বিচারের দাবিতে পোস্টার টাঙানো হয়েছিল। বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়াকে দেখা গিয়েছে লোকজনকে নিয়ে বুকে কালো ব্যাজ পরে দর্শনার্থীদের সঙ্গে শহরের রাস্তায় হাঁটতে। শহরের কিছু নাগরিককে কালো পোশাক পরে মণ্ডপে ঘুরে প্রতিবাদ জানাতেও দেখা গিয়েছে। অনেক প্রতিবাদী মহিলার চুড়িদারের পিছনে লেখা ছিল, ‘আমার দুর্গা বিচার পাক’।

সব মিলিয়ে এ বারের দুর্গাপুজোয় মানুষ শামিল হলেও সঙ্গী ছিল বিষণ্ণতাও। ১৪ অগস্ট মেয়েদের ‘রাত দখলে’র দিন থেকে এখানে লাগাতার প্রতিবাদ কর্মসূচি হচ্ছে। শেষ কবে এ ভাবে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বনগাঁর নাগরিক সমাজ পথে নেমেছিল, তা প্রবীণদেরই স্মরণে নেই। স্বাভাবিক ভাবেই এ বারে বনগাঁর পুজো অন্য মাত্রা পেয়েছে এই আবহে।

বনগাঁর পুরপ্রধান গোপাল শেঠ অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘বিরোধীরা চেষ্টা করেছিল পুজোয় অশান্তি পাকানোর। কিন্তু উৎসবে শামিল হওয়া জনস্রোতে তা মলিন হয়ে গিয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement