পরিদর্শন: নদীবাঁধ ঘুরে দেখছেন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা। ছবি: সমরেশ মণ্ডল
ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় দিন গুনছেন সুন্দরবনবাসী। আজ, রবিবার সকালেই নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। নিম্নচাপ পরবর্তী সময়ে আরও গভীর হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। তবে সে কোন পথে এগোবে, তা জানাতে পারেনি আবহাওয়া দফতর।
ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড় ঘিরে তৎপর হয়েছে রাজ্য প্রশাসন। তৎপর কাকদ্বীপ মহকুমা প্রশাসনও। শনিবার দুপুরে ব্লকের সমস্ত দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক করেন বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল। উপস্থিত ছিলেন সাগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি স্বপন প্রধান, গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান সন্দীপ পাত্রেরা। সাগর ব্লকের ১৮টি ফ্লাড শেল্টারে প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। জেনারেটর, পানীয় জল ও অন্যান্য পরিষেবা ঠিক আছে কি না, তা খতিয়ে দেখেন ব্লক ও পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরা। রবিবার সকাল থেকে ব্লকের ১৮টি ফ্লাড শেল্টারে ত্রিপল, চাল, ডাল, শুকনো খাবার পাঠানোর কাজ শুরু হবে।
সুন্দরবনের সব থেকে বিপদগ্রস্ত ভাঙনপ্রবণ দ্বীপ ঘোড়ামারা। ইয়াসে পুরো দ্বীপই নদীর নোনা জলে ডুবে গিয়েছিল। অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ওই দ্বীপে ঝড়ের সময়ে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে পৌঁছনো যায় না। তাই ঝড়ের আগে রবিবার সকালে নৌকোয় করে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল, ডাল, ত্রিপল, পানীয় জল, শুকনো খাবার, জামা-কাপড়, প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে বলে প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে ঘোড়ামারা দ্বীপ এলাকার বাসিন্দাদের এনে সাগরের ফুলবাড়ি শীতলা হাইস্কুল ও বামনখালি হাইস্কুলের পাশে ফ্লাড শেল্টারে রাখা হতে পারে। তাঁদের থাকা-খাওয়ার সমস্ত ব্যবস্থা করবে প্রশাসন। ঘোড়ামারা দ্বীপের বাসিন্দা অঞ্জলি কান্ডার বলেন, ‘‘ইয়াসে ভিটেমাটি হারিয়ে দ্বীপের উঁচু জায়গায় ত্রিপল টাঙিয়ে ছিলাম। আবার ঝড়ে হয় তো ত্রাণ শিবিরে গিয়ে আশ্রয় নিতে হবে। এই তো আমাদের জীবন! স্থায়ী ভাবে বসবাসের ভাগ্যটুকু আমাদের নেই।’’
যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নদী ও সমুদ্রবাঁধের ক্ষতির আশঙ্কা থাকেই। সে জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে বেহাল ও দুর্বল বাঁধগুলি পরিদর্শন করে দ্রুত মেরামতির জন্য সেচ দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনের প্রতিটি ব্লকে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। গত দু’সপ্তাহ ধরে কাকদ্বীপ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় সেচ দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বাঁধ পরিদর্শন করেন। সাগরের মন্দিরতলা, বঙ্কিমনগর, গঙ্গাসাগর এলাকার বাঁধ পরিদর্শন করেন তিনি। এ ছাড়া, পাথরপ্রতিমার জি প্লট এলাকাও ঘুরেদেখেন। সেচ দফতর থেকে সুন্দরবন এলাকায় কোথায় কোথায় নদী ও সমুদ্রবাঁধের সমস্যা রয়েছে, খোঁজ-খবর করেন মন্ত্রী। ঘূর্ণিঝড় আসার আগে বেহাল বাঁধ দ্রুত মেরামতির নির্দেশ দেন।
বিডিও বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড় আসার আগে প্রাথমিক পর্যায়ে একটি বৈঠক করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে এনে রাখার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ফ্লাড শেল্টার ও স্কুলগুলির ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেছি।’’ মহকুমাশাসক অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মহকুমা এলাকায় ৬৪টি বহুমুখী সাইক্লোন শেল্টার, ১২টি ফ্লাড শেল্টার ও অস্থায়ী ১৫৪টি জায়গা প্রস্তুত রাখার কাজ চলছে। সোমবার থেকে কন্ট্রোল রুম চালু হয়ে যাবে। সেচ দফতর বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করেছে।’’
মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা জানান, দুর্যোগ আসার আগে প্রশাসন সব রকম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। বেহাল বাঁধগুলি মেরামতির কাজ চলছে। ঘোড়ামারা ও মৌসুনি দ্বীপের উপরে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।