গোছগাছ: স্কুল শুরুর তোড়জোড় বনগাঁয়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
স্কুল খোলার প্রস্তুতি পর্বে নানা ধরনের সমস্যার মুখে পড়েছে স্কুলগুলি। সরকারি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পড়ুয়াদের থার্মাল চেকিং করতে হবে। কিন্তু কোনও স্কুলেই থার্মাল গান নেই। অনেক স্কুলে তা কেনার মতো টাকাও নেই। থার্মাল গান কেনা হলেও, তা দিয়ে তাপমাত্রা পরীক্ষা করার কর্মী নেই অনেক স্কুলে। শারীরিক দূরত্ব মেনে ক্লাস করানোর কথা বলা হয়েছে নির্দেশিকায়। প্রয়োজনে একই ক্লাসের পড়ুয়াদের একাধিক ঘরে ভাগ করে বসানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু শারীরিক দূরত্ব মেনে ক্লাস করানোর মতো পরিকাঠামো নেই অনেক স্কুলে। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ থাকলেও নেই পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকা।
হাবড়ার প্রফুল্লনগর বিদ্যামন্দির স্কুলে চারটি শ্রেণি মিলিয়ে পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় ৬০০। দূরত্ববিধি মেনে পড়ুয়াদের বসানোর মতো পর্যাপ্ত ঘর আছে। তবে নেই প্রয়োজনীয় শিক্ষক-শিক্ষিকা। প্রধান শিক্ষক সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, “শারীরিক দূরত্ব মেনে ক্লাস করার মতো ঘর আছে। তবে সেকশন বাড়লে, সেই অনুযায়ী ক্লাস করানোর মতো শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই। থার্মাল গানও নেই। কোথা থেকে পাব যানি না।” গোপালনগরের ব্যাসপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বরূপরাজ রায়চৌধুরী বলেন, “সরকারি নির্দেশ মেনে ক্লাস হবে। তবে থার্মাল গান নেই। তা কেনার মতো অর্থ নেই। সরকারি মাস্কের মান ভাল না। স্যানিটাজ় করতে অর্থ বরাদ্দ হয়নি সরকারি ভাবে। আমরা নিজেদের মতো করে করছি।” সুভাষনগর জীবনস্মৃতি ইন্সটিটিউটশনে নবম ও দশম শ্রেণি মিলিয়ে পড়ুয়া ৯০ জন। আমপানে সিঁড়ির ঘরের চাল উড়ে গিয়েছিল। এখনও তা মেরামত করা যায়নি। সরকারি সাহায্য মেলেনি বলে অভিযোগ। প্রধান শিক্ষক পীযূষকান্তি সাহা বলেন, “ক্লাস করতে অসুবিধা নেই। তবে স্কুলে থার্মাল গান নেই। স্কুল তহবিলেও টাকা নেই।”
বনগাঁর কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে নবম, দশম, একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণি মিলিয়ে ছাত্রীর সংখ্যা ১২০০ জন। স্কুল সূত্রের খবর, রোটেশন পদ্ধতিতে ক্লাস করানোর কথা ভাবা হয়েছে। নবম শ্রেণির চারটি সেকশন। ছাত্রী বেশি এলে একদিন দু’টি সেকশন, পরের দিন বাকি দু’টি সেকশনের ক্লাস নেওয়া হবে। প্রতিটি শ্রেণির জন্য এই ব্যবস্থা ভাবা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ভাবা হয়েছে, দূরত্ব বজায় রাখতে ত্রিভুজ আকারে ছাত্রীদের বসানো হবে। একটি বেঞ্চে ২ জন বসলে পরের বেঞ্চে ১ জন বসবে। কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে তা নিয়ে সোমবার স্কুল কর্তৃপক্ষ বৈঠক ডেকেছে। ছাত্রীদের কী করণীয়, তা ছাপিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। টিফিনের ছুটিও রোটেশন পদ্ধতিতে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে। ইতিমধ্যেই শ্রেণিকক্ষগুলি সাফ করা হচ্ছে। তারপরে স্যানিটাইজ় করা হবে। স্কুলে থার্মাল গান আছে। তবে কর্মী রয়েছেন মাত্র একজন। প্রধান শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী উকিল বলেন, “কর্মীর সঙ্গে দু’জন শিক্ষিকাকে তাপমাত্রা মাপার কাজে লাগানো হবে।” বনগাঁ হাইস্কুলে ওই চারটি শ্রেণি মিলিয়ে পড়ুয়া সংখ্যা ১২০০। প্রধান শিক্ষক কুণাল দে বলেন, “পর্যাপ্ত ঘর আছে। প্রতি বেঞ্চিতে দু’জন করে বসানো হবে। প্রতিটি শ্রেণির জন্য অতিরিক্ত আরও কয়েকটি সেকশন ভেবে রেখেছি। তবে ছাত্র কত আসবে, তা নিয়ে চিন্তা আছে। প্রার্থনা সঙ্গীত শ্রেণিকক্ষের মধ্যেই করা হবে। স্কুলের থার্মাল গান আছে। আশা করছি অসুবিধা হবে না।”
জেলার অনেক স্কুলেই একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। এই পরিস্থিতিতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শ্রেণিকক্ষ বাড়লে হয় ওই সময়ে এক বা একাধিক সেকশনের পড়ুয়াদের ক্লাস না করিয়ে বসিয়ে রাখতে হবে। না হলে নিচু ক্লাসের শিক্ষক, শিক্ষিকাদের দিয়ে ক্লাস নিতে হবে। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অভিভাবকেরা।
শিক্ষা দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, এখন মূলত প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ক্লাস হবে। সেকশন বাড়িয়ে রোটেশন পদ্ধতিতে কাজ করলে অসুবিধা হবে না। থার্মাল গান প্রসঙ্গে বনগাঁ মহকুমার অতিরিক্ত স্কুল পরিদর্শক (এডিআই) দিব্যেন্দু পাল বলেন, “থার্মাল গান সরকার না দিলে স্কুল কর্তৃপক্ষকে তা কিনতে হবে নিজস্ব তহবিল থেকে। তারা তো পড়ুয়াদের কাছ থেকে উন্নয়ন সহ বিভিন্ন খাতে অর্থ নিয়ে থাকে। গত একবছরে তো স্কুল কর্তৃপক্ষের ব্যয় কমেছে। ফলে থার্মাল গান কিনতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।” (শেষ)