BJP

আসছেন শাহ, গাড়ির কনভয় নিয়ে চলল মহড়া

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ঠাকুরবাড়িতে ঢোকার মহড়া চলছে।  

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র 

ঠাকুরনগর শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:১১
Share:

ফাইল চিত্র।

আসছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বুধবার দেখা গেল, সাজ সাজ রব গাইঘাটার ঠাকুরনগরে, মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে।

Advertisement

বেলা তখন আড়াইটে। মতুয়া ভক্ত ও বিজেপি কর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেছেন। হঠাৎ হুটারের শব্দে সকলে ভাবলেন, কোনও ভিভিআইপি হয় তো এসেছেন। উপস্থিত সাংবাদিকেরা ছুটলেন ক্যামেরা হাতে। সারিসারি গাড়ির কনভয় এসে থামল ঠাকুরবাড়ি সংলগ্ন রাস্তায়। দু’টি গাড়ি ঢুকল ঠাকুরবাড়িতে হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরের সামনে। গাড়ি থেকে নেমে এলেন আগ্নেয়াস্ত্র হাতে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা কর্মীরা। একটি গাড়ির গেট খুলে দিলেন। গাড়ি ছিল ফাঁকা। ততক্ষণে রাস্তার দখল নিয়েছেন অন্য নিরাপত্তা কর্মীরা। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক অফিসারকে দেখা গেল, নিরাপত্তা কর্মীদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন, কী ভাবে পরিস্থিতি সামলাতে হবে।

বোঝা গেল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ঠাকুরবাড়িতে ঢোকার মহড়া চলছে।

Advertisement

আজ, বৃহস্পতিবার ঠাকুরবাড়িতে মতুয়া ও উদ্বাস্তু সমাজের মানুষের সামনে জনসভা করার কথা শাহের। সকালে হেলিকপ্টার এসে একপ্রস্থ মহড়া দিয়ে গিয়েছে। ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে করা হয়েছে শাহের হেলিপ্যাড। সেখানে নেমে সড়ক পথে তিনি ঠাকুরবাড়ি পৌঁছবেন। এ দিন হেলিকপ্টার দেখতে অনেকে ভিড় করেন। কেউ কেউ দূর থেকে মোবাইলে ছবি তুলছিলেন।

শাহের সভার জন্য মূল মঞ্চ ছাড়াও আরও দু’টি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। মূল মঞ্চটি ছাউনি দেওয়া। সেখানে ফ্লেক্সে লেখা, ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে এবং সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের ডাকে বিশাল জনসভা’। ফ্লেক্সে শান্তনু ছাড়াও বড়মা বীণাপানি ঠাকুর, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছবি। বাকি দু’টি মঞ্চে লেখা রয়েছে ‘গোঁসাই মঞ্চ’ এবং ‘বিশেষ অতিথি মঞ্চ।’ সভাস্থলের আশপাশে বিজেপির দলীয় পতাকা এবং মতুয়া পতাকা-নিশানে মুড়ে ফেলা হয়েছে। তোরণ তৈরি হয়েছে। আছে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শান্তনু, বীণাপানি ঠাকুরের ছবি, কাটআউট। বনগাঁ মহকুমা জুড়েই তোরণ লাগানো হয়েছে বিজেপি এবং অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের পক্ষ থেকে। চাঁদপাড়া-ঠাকুরনগর সড়কের দু’পাশে বিজেপির দলীয় পতাকা লাগানো হয়েছে। একই সঙ্গে লাগানো হয়েছে তৃণমূলের পতাকাও। শান্তনু সভাস্থল ঘুরে দেখেছেন এ দিন। এসেছিলেন বিজেপি নেতা তথা সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাতো। তিনি ঠাকুরবাড়িতে এসে প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেছেন দফায় দফায়।

উত্তরবঙ্গ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে মতুয়ারা ঠাকুরবাড়িতে আসতে শুরু করেছেন। তাঁদের জন্য রান্না করে খাওয়ানো ব্যবস্থা করা হয়েছে। রান্নার কাজে যুক্ত এক মতুয়া ভক্ত জানালেন, এক লক্ষ মানুষের খাওয়ার জন্য রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঠাকুরবাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে, মতুয়া ভক্তদের জন্য খিচুড়ি এবং কর্মীদের জন্য ডাল-সব্জি-ভাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

৩০ জানুয়ারি জলপাইগুড়ি থেকে এসেছিলেন মতুয়া ভক্ত সদানন্দ গায়েন। বুধবার তিনি হাজারখানেক মতুয়ার সঙ্গে আবারও এসেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের দাবি, নিঃশর্ত নাগরিকত্ব। আমরা ধৈর্য ধরতে রাজি। তবে নাগরিকত্ব আমাদের দিতেই হবে।’’

এ দিন সকাল থেকেই সভাস্থল পুলিশ ঘিরে রেখেছে। সাধারণ মানুষকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুপুর ৩টের সময়ে শাহ ঠাকুরবাড়িতে আসবেন। মন্দিরে পুজো দেবেন। মতুয়া গোঁসাই সাধুদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। শেষে হবে জনসভা।

ঠাকুরবাড়িতে এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করে বনগাঁর প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুর দাবি করেন, ‘‘শাহের সভা নিয়ে মতুয়ারা আগ্রহী নন। সে কারণে তাঁদের এ দিন ঠাকুরবাড়িতে কম দেখা যাচ্ছে।’’ শান্তনু অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘সকাল থেকেই উত্তরবঙ্গ থেকে হাজার হাজার মতুয়া ভক্ত আসতে শুরু করেছেন। তাঁরা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে রয়েছেন। সন্ধ্যা থেকে ভিড় উপচে পড়বে। ২ লক্ষ মানুষ সভায় আসবেন।’’ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এ দিন হাবড়ায় এসে বলেন, ‘‘নব্য ও পুরনো বিজেপির দ্বন্দ্বে শাহকে কালো পতাকা দেখিয়ে তৃণমূলের ঘাড়ে দোষ চাপানো হতে পারে। আমরা এই সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি না।’’ বিজেপি অবশ্য এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement