বন্ধ নিকাশি নালা, ফসল জলের নীচে

আশঙ্কাটা সম্প্রতি প্রায়ই শোনা যেত গ্রামের আনাচকানাচে। অনেক নিকাশি নালা বুঝিয়ে বহুতল ও দোকানঘর নির্মাণ হয়ে গিয়েছে। কোথা দিয়ে জল বের হবে? সেই আশঙ্কাই সত্যি করে গত কয়েক দিনের একটানা বৃষ্টির পরে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ডায়মন্ড হারবারের বিভিন্ন এলাকা।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৫ ০১:৩৬
Share:

জলমগ্ন এলাকা। —নিজস্ব চিত্র।

আশঙ্কাটা সম্প্রতি প্রায়ই শোনা যেত গ্রামের আনাচকানাচে। অনেক নিকাশি নালা বুঝিয়ে বহুতল ও দোকানঘর নির্মাণ হয়ে গিয়েছে। কোথা দিয়ে জল বের হবে? সেই আশঙ্কাই সত্যি করে গত কয়েক দিনের একটানা বৃষ্টির পরে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ডায়মন্ড হারবারের বিভিন্ন এলাকা। ডুবে গিয়েছে অনেক চাষের খেত। জল ঢুকেছে বাড়ির ভিতরেও।

Advertisement

জেলা কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সাগর বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এ বার জেলায় প্রায় ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে ধানের বীজ ফেলা হয়েছিল। তার মধ্যে প্রায় ২২ হাজার হেক্টর জমি এখন জলের নীচে চলে গিয়েছে। প্রায় ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে ধানের বীজ রোয়া হয়েছিল। তারমধ্যে ২৩ হাজার হেক্টর জমি জলের তলায়। কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১২ হাজার হেক্টর ধান জমির ক্ষতি হয়েছে। কুলপি ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা রাজা সরকার জানালেন, তার এলাকায় ১৮০০০ হেক্টর কৃষি জমির ভিতর ৫৫০০ হেক্টর জমি জলে ডুবে রয়েছে। সব্জি চাষের বেশিরভাগ জমিই জলমগ্ন। রাজাবাবু বলেন, ‘‘নিকাশি খালের সমস্যার জন্যই জল নামতে দেরি করছে। কারণ জল বের হওয়ার রাস্তাই নেই।’’ মথুরাপুর-১ কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এই ব্লকের প্রায় ১২০০ হেক্টর জমিতে বীজ পোতা হয়েছিল। সেই জমি এখন জলের নীচে। বর্ষাকালীন সব্জি চাষের অবস্থাও তথৈবচ। একই ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্যান্য ব্লকগুলির বিভিন্ন চাষের জমি।

কেন এই অবস্থা?

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, অপরিকল্পিত নির্মাণ কাজই নিকাশি ব্যবস্থাকে প্রায় নষ্ট করে দিয়েছে। ডায়মন্ড হারবার মহকুমার বড় নিকাশি খালগুলি শেষ কবে সংস্কার হয়েছে সেটা এলাকার অনেক প্রবীণ ব্যক্তিও মনে করতে পারলেন না। নাব্যতা কমে অল্প বৃষ্টিতেই উপচে যাচ্ছে বড় মগরাহাট ও রায়দিঘি খাল। সংযোগকারী ছোট খালগুলিরও একই অবস্থা। খাল ভরে রয়েছে কচুরি পানা ও আবর্জনা। অনেক স্লুইস গেট অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, অনেক নিকাশি খাল বুজিয়ে বাড়ি, পার্টি অফিস, দোকান তৈরি হয়েছে। কোথাও কোথাও পুরো খালটাই ডাঙা জমি হয়ে গিয়েছে। অথচ ওই খালগুলিতে আগে জোয়ার-ভাটা খেলত।

নিকাশি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ডায়মন্ড হারবারের সব কটি ব্লকেই এখন কমবেশি জলবন্দি অবস্থা। মন্দিরবাজারের মল্লিকপুরের বাসিন্দা অমল হালদার, সৈকত মণ্ডলরা জানালেন, তাঁদের চাষের জমি এখন জলের নীচে। তাঁরা বলছেন, ‘‘এলাকায় কারখানা নেই। একমাত্র জীবিকা আমন ধানের চাষ। এ বার তো সংসার চালানোই মুশকিল হয়ে যাবে।’’ মথুরাপুর ১ ব্লকের বাপুলি বাজার গ্রামের প্রবীণ চাষি হৃদয় পুরকাইত, লক্ষ্মণ দাসেদের দাবি, ‘‘বৃষ্টি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এই বৃষ্টি ডায়মন্ড হারবার আগেও দেখেছে। তখন এই ভাবে গোটা এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়নি। নিকাশি খাল বন্ধ হয়ে গিয়েই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে।’’ কৃষি দফতরের এক কর্তা জানান, ফের বীজতলা তৈরির জন্য ব্লক কৃষি দফতর থেকে চাষিদের উন্নত ধানের বীজ দেওয়া শুরু হয়েছে। তবে সে তো সাময়িক ব্যবস্থা। এরপরেও তো ভারী বৃষ্টি হবে। তখন ফের জলবন্দি হবে চাষের জমি। চাষিরা দাবি করছেন,বর্ষা মিটলেই নিকাশি নালাগুলি সংস্কার করা হোক। না হলে প্রশাসন থেকে সাধারণ মানুষ— সকলকেই বছর বছর এই ক্ষতি মানতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement