স্কুল ভবন বেহাল, প্রাঙ্গণে বিছানো খড়। নিজস্ব চিত্র
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মূল্যায়ণে প্রাথমিক শিক্ষায় বড় রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সেরার শিরোপা পেয়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, পরিকাঠামো থেকে শিক্ষকের অভাব-সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত প্রাথমিক স্কুলগুলি। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখল আনন্দবাজার
নামেই বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ। কিন্তু পাঁচিল না থাকায় স্কুল ভবনের সামনেই ফেলে রাখা হয়েছে খড়ের গাদা। একপাশে ভ্যান পার্ক করা। শুধু তাই নয়, ধান শুকানো, জামাকাপড় মেলার কাজেও স্থানীয়েরা এই জায়গা ব্যবহার করেন। দীর্ঘদিন অব্যবহারে ভবনের গায়ে শ্যাওলা ধরেছে। ছাদ দুর্বল হয়ে গিয়েছে, নোনা ধরেছে দেওয়ালে। কুলপির দেরিয়া জামবেড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টির বর্তমানে এমনই দশা।
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৪৩ সালে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে সরকারি অনুমোদন মেলে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার ওই স্কুলে বর্তমানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১২০। শিক্ষক রয়েছেন ৪ জন। বিদ্যালয়টিতে আগে একটি পাকা ভবন ও একটি টালির ছাদের ভবন ছিল। কিন্তু সংস্কারের অভাবে টালির চালের ভবনটি বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। বহু আবেদনের পর টালির চালের ঘরটি সংস্কার হয়ে বছরখানেক আগে একটি পাকা ভবন তৈরি হয়। কিন্তু ওই ভবনে সাকুল্যে একটি বা দুটি শ্রেণির পড়াশোনা চলতে পারে। বাকি পড়ুয়াদের ক্লাস, শিক্ষকদের বসার জন্য ভরসা পুরনো ছাদের ভবনটি। সংস্কারের অভাবে বর্তমানে সেটি শোচনীয়। ছাদে ফাটল দেখা দিয়েছে, বর্ষায় ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। সব দেওয়ালে প্লাস্টারের প্রলেপ পড়েনি। বর্তমানে দেওয়ালগুলিতে শ্যাওলা ধরে গিয়েছে। ভবনের মেঝে মাটির। বর্ষার জল ঢুকে মেঝে কাদায় ভরে গিয়েছে। ওই ভবনে দরজা, জানলার পাল্লা নেই। ফলে, বৃষ্টি হলেই ছাদ এবং জানলা দিয়ে জল ঢোকে ঘরে।
ভবন ছাড়াও অন্যান্য পরিকাঠামো বেহাল এখানে। এতজন ছাত্রছাত্রীদের জন্য শৌচালয় রয়েছে মাত্র দুটি। শিক্ষকদের জন্য আলাদা কোনও শৌচালয় নেই। ফলে, স্কুল চলাকালীন শৌচালয়ে যেতে হলে সমস্যায় পড়েন শিক্ষকেরা। স্কুলে একটি পানীয় জলের নলকূপ থাকলেও তা বছরের বেশিরভাগ সময়ই অকেজো হয়ে পড়ে থাকে। তাই ছাত্রছাত্রীরা বাড়ি থেকেই পানীয় জল নিয়ে আসে। শুধু তাই নয়, জলের অভাবে মিড-ডে মিলের রান্নার ক্ষেত্রেও অসুবিধায় পড়তে হয়।
বিদ্যালয়ের রান্নাঘরটিও বেহাল। ওই ঘরের অ্যাসবেসটসের ছাউনি অনেক জায়গায় ভেঙে গিয়েছে। বর্ষায় ঘরের ভিতর জল ঢোকে। ভারী বর্ষার দিনে ওই ঘরে রান্না করা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে ওঠে। পড়ুয়াদের খাওয়ার কোনও আলাদা ঘর নেই। ক্লাস ঘরে বা খোলা আকাশের নীচে বসেই তারা খাওয়াদাওয়া করে। স্কুলে ছোটদের খেলার মাঠ নেই। উপরন্তু বিদ্যালয়ে পাঁচিল না থাকায় স্কুলের সানমের ফাঁকা জায়গা স্থানীয়েরা নানা কাজে ব্যবহার করছেন।
গ্রামের বাসিন্দারা জানালেন, ওই এলাকায় এই স্কুলটি সবচেয়ে পুরনো। আগে স্কুলটিতে অনেক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করত। কিন্তু পরিকাঠামো বেহাল হওয়ায় অনেকেই ছেলেমেয়েদের অন্য স্কুলে পাঠাচ্ছেন।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সত্যপ্রিয় মণ্ডল বলেন, ‘‘নতুন ক্লাসঘর না হলে ছাত্রছাত্রীদের বসাতেই পারব না। শিক্ষকদের বসার মতো আলাদা কোনও ঘর নেই। ফলে অফিশিয়াল কাজ করতে যথেষ্ট সমস্যা হয়। বিষয়গুলি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’’
এই প্রসঙ্গে কুলপি ব্লকের বিডিও দেবর্ষি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় পরিকাঠামোর কিছু সমস্যা হয়েছে। সরকারি অর্থ বরাদ্দ হলে সংস্কারের কাজ শুরু হবে।’’