কাউকে চাকরির টোপ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কাউকে আবার সম্পর্কের বিশ্বাসে ভুলিয়ে। পুলিশের তৎপরতায় দীর্ঘদিন পরে পুণে থেকে ফিরে দুঃখের কথা শোনালেন চার যুবতী।
শুক্রবার তাঁরা কাকদ্বীপে ফিরেছেন। পুলিশ জানায়, একজনের খোঁজে পুণের বুধাপট্টির এক যৌনপল্লিতে হানা দেওয়া হয়েছিল। ওই একজনকে খুঁজতে গিয়েই উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই চার মেয়ের হদিস পাওয়া যায়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের মেয়েটি মোমিনপুরে কাজ করতেন। সেখানে একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে পাড়ি দেন পুণেতে। তারপরই বুঝতে পারেন, তিনি বিক্রি হয়ে গিয়েছেন। চলে এসেছেন পতিতালয়ে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরিবারের কাছে তাঁর কোনও খবর ছিল না। পরে পরিবার জানতে পেরে থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করে।
তার পরেই তদন্ত নামে কাকদ্বীপ পুলিশের একটি দল। সাব ইন্সপেক্টর তনুময় দাসের নেতৃত্বে ওই দল পুণে পাড়ি দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। ঠিক ওই সময় ঝুঁকি নিয়ে এক খদ্দেরের মোবাইল থেকে বাড়িতে ফোন করে মেয়েটি। তাতেই মেয়েটিকে খোঁজা আরও সহজ হয়ে যায় পুলিশে। এ দিন থানায় বাবা তাঁকে নিতে এসেছিলেন। মেয়েটির কথায়, ‘‘প্রচন্ড অত্যাচার করা হতো। দিনে প্রায় কুড়ি বার ধর্ষণ করা হতো। ঠিক মতো খেতে দেওয়া হতো না। একটু অরাজি হলেই গায়ে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া হতো। পালানোর সুযোগ খুঁজছিলাম। পরে একজনের মোবাইল থেকে বাড়িতে ফোন করি। এখানকার পুলিশ না গেলে আমাদের হয়তো ওখানেই সারাজীবন থাকতে হতো।’’
শুধু কাকদ্বীপের ওই মেয়েটি নন। উদ্ধার হওয়া ২২-২৫ বছরের বাকি মেয়েদের কাউকে ৯ মাস, সাত মাস তো কাউকে এক বছর ধরে ওই যৌনপল্লিতে রাখা হয়েছে। তাঁরাও অত্যাচারের কথা শুনিয়েছেন। তাদের মধ্যে এক জন বসিরহাটের মেয়েও রয়েছে। তাঁকে কাজের টোপ দিয়ে নিয়ে গিয়েছিল পাচারকারীরা। সাত মাসে আগে নিখোঁজ হন তিনি। পরে মামলাটি কলকাতা হাইকোর্টে ওঠে। কোর্টের নির্দেশে সিআইডির অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং শাখার হাতে চলে যায় মামলাটি। এ দিন তাঁকে ওই সংস্থার গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেয় কাকদ্বীপ থানা। বাকি দুই মেয়েকে হোমে পাঠানো হয়েছে।
ফরাজখানা থানা এলাকায় ওই পতিতালয়ে বাইরে থেকে কোনও পুলিশ গিয়ে বেশি খোঁজখবর করলে প্রচুর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। আক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে পুলিশের উপরেও। প্রাথমিকভাবে দুই মহিলা কনস্টেবলকে নিয়ে পুলিশ আধিকারিকেরা ওই যৌনপল্লিতে গিয়েছিলেন খদ্দের সেজেই। তাঁদেরই একজন বলেন, ‘‘প্রতিটি ঘরে রয়েছে অসংখ্য চোরা কুঠুরি। তালা দেওয়া চেম্বার। বেশ কয়েকটির তালা ভেঙে কাকদ্বীপের মেয়েটির সন্ধান পাই। তখনই বসিরহাট, মন্দিরবাজার, পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি এলাকার মেয়েরাও তাদের উদ্ধার করার জন্য কাতর আবেদন জানায়। তাদেরও উদ্ধার করা হয়।’’