উদ্ধার হওয়া মোটরবাইক। ইনসেটে, ধৃতরা।
এ যেন কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা!
পুলিশের গড়া মোটরবাইক বাহিনীর হাতে দিন কয়েক আগে ধরা পড়েছিল শহরের দুই ছিনতাইবাজ। মোটরবাইক নিয়ে শহরের রাস্তায় ছিনতাইয়ের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার ফের বছর আঠারোর দুই তরুণ মোটরবাইক আরোহীকে ধাওয়া করে গ্রেফতার করল পুলিশের বাইক-বাহিনী। ধৃত ইউনুস মণ্ডল এবং শাজাহান মোল্লার বিরুদ্ধে রাস্তাঘাটে মহিলাদের কটূক্তি করা ছাড়াও ছিনতাই ও তোলাবাজির অভিযোগ রয়েছে। তাদের কাছ থেকে একটি দামি মোটরবাইক, একটি রিভলভার এবং দু’রাউন্ড গুলি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
মাস ছয়েক ধরেই বসিরহাট শহরের বিভিন্ন রাস্তায় মোটরবাইক আরোহী কিছু তরুণের উপদ্রবে নাজেহাল হচ্ছেন পথচারীরা। দ্রুত গতিতে মোটরবাইক চালিয়ে এসে তারা ছিনতাই তো করছিলই, মহিলাদের উত্ত্যক্ত করা কটূক্তি বা তাঁদের শ্লীলতাহানির চেষ্টাও বাদ পড়ছিল না বলে অভিযোগ। অথচ, ওই সব তরুণদের নামে থানায় কোনও অভিযোগ সে ভাবে দায়ের না হওয়ায় দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে কালঘাম ছুটছিল পুলিশেরও। কেননা, মোটরবাইকে থাকার জন্য অভিযুক্তদের সে ভাবে মুখ দেখতে পাচ্ছিলেন না ভুক্তভোগীরা। বাড়ছিল আতঙ্ক।
মোটরবাইক বাহিনীর সেই দৌরাত্ম্য বন্ধ করতেই সম্প্রতি কিছু পুলিশকর্মী এবং সিভিক ভলান্টিয়ারকে নিয়ে পাল্টা মোটরবাইক বাহিনী গড়ে বসিরহাট থানাও। তার পরেই সাফল্য মিলতে থাকে। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, বসিরহাট শহরে অল্পবয়সী ছেলেদের জোরে মোটরবাইক চালাতে দেখলেই আটক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দামি মোটরবাইক নিয়ে নানা দুষ্কর্ম করছে অল্পবয়সী ছেলেদের একটা দল। মোটরবাইকের তেলের দাম এবং নিজেদের অন্যান্য খরচ চুলতে তার ছিনতাইও করছে। ওই পুলিশকর্তার মতে, ‘‘অভিভাবককেরা সচেতন না হলে শুধু পুলিশের পক্ষে এই প্রবণতার মোকাবিলা করা কঠিন।’’
অল্পবয়সী ছেলেদের ওই সব দুষ্কর্মের জন্য অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষকদের একাংশকেও দায়ী করেছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেবাঞ্জন পান। তিনি বলেন, ‘‘সমাজ বদলে গিয়েছে। অল্পবয়সীদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এর জন্য দায়ী অভিভাবক এবং শিক্ষকদের একাংশ। তাঁরা মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে পারছেন না।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের বড় রাস্তা ছাড়াও গলিতেও মোটরবাইক নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মোটরবাইক আরোহী কিছু তরুণ। দিনেরবেলা মেয়েদের স্কুল-কলেজের গেটের সামনে এবং সন্ধ্যায় শহরের বিভিন্ন রাস্তায় তারা নানা দুষ্কর্ম করছে। কখনও মহিলাদের ওড়না ধরে টানছে, কখনও বা মোটরবাইকের আলো ফেলে মহিলাদের হার ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দিচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেলে বসিরহাট স্টেশনের কাছে ইউনুস এবং শাজাহান মোটরবাইকে এসে এক মহিলার ওড়না টেনে নেওয়ার চেষ্টা করে। ঘটনাস্থলের কাছে থাকা পুলিশের মোটরবাইক বাহিনী ধাওয়া করে তাদের ধরে ফেলে।
শাজাহানকে যখন থানায় আনা হয়, তখন শহরের এক পোশাক ব্যবসায়ী তার বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন। জেরায় সেই অভিযোগ শাজাহান মেনে নেন বলে পুলিশের দাবি। ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘শাজাহান মেয়েকে উত্ত্যক্ত করত। আমার কাছে চিঠি দিয়ে ৫ লক্ষ টাকা চেয়েছিল। দিতে না পারলে মেয়েকে দেওয়ার কথা বলেছিল। কোনও দাবি মানা না হলে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়।’’
পুলিশের মোটরবাইক বাহিনী পথে নামায় কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন সাধারণ মানুষ। তবে, তাঁরা মনে করছেন পুলিশের আরও তৎপর হওয়া উচিত। প্রশান্ত কর্মকার নামে এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘যে ভাবে কিছু ছেলে মোটরবাইকে চড়ে দুষ্কর্ম করছে, তাতে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিক।’’ রতন বৈদ্য নামে আর এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘শুধু দুষ্কর্মই নয়, ওই সব বাইক আরোহীদের জন্য দুর্ঘটনাও ঘটছে। পুলিশের আরও কড়া হওয়া উচিত।’’ শেফালি গুহ নামে এক গৃহবধূ বলেন, ‘‘মেয়েক স্কুলে পাঠিয়েও শান্তিতে থাকতে পারি না। ওই সব ছেলেদের কথা ভেবে।’’
পুলিশ অবশ্য সাধারণ বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করছে।