—ফাইল চিত্র
অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এমআইএম) আসাদউদ্দিন ওয়েইসি ফুরফুরা শরিফে গিয়ে রবিবার বৈঠক করেছেন আহলে সুন্নাতুল জামাতের কর্ণধার আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে। আব্বাস ইতিমধ্যে এ রাজ্যে বিধানসভা ভোটে লড়বেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করার পরে আসাদউদ্দিন জানিয়েছেন, আব্বাসের নেতৃত্বে তাঁরা জোট বেঁধে বিধানসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সে ক্ষেত্রে আসন সমঝোতা কী হবে, কতগুলি আসনে তাঁরা প্রার্থী দেবেন— তা নির্দিষ্ট করে কিছু ঘোষণা করা হয়নি। ডিসেম্বর মাসে আব্বাসের নতুন দল ঘোষণা করার কথা থাকলেও এখনও তিনি তা করেননি। যদিও আব্বাস তাঁর সংগঠন আহলে সুন্নাতুল জামাতের ব্যানারে ভাঙড়-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় জলসার নামে জনসভা করছেন।
এ দিকে, দুই সংখ্যালঘু ধর্মীয় সংগঠনের বৈঠকের পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তৈরি হয়েছে চাপানউতর। অনেকে মনে করছেন, সংখ্যালঘু ভোট ভাগাভাগি হয়ে গেলে বিজেপির ফায়দা হবে। বিহার ভোটে এমআইএমের উত্থান বিজেপিকেই সুবিধা পাইয়ে দিয়েছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মত। রবিবার বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্যেও সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়েছে। এ রাজ্যে ভোটের অঙ্কে আব্বাসের হাত ধরে এমআইএম ভূমিকা কী হতে চলেছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।
গত বিধানসভা ভোটে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ৩১টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ২৯টি আসন। বামেরা পেয়েছিল ২টি। লোকসভা নির্বাচনে জেলার চারটি আসনেই জয় লাভ করে তৃণমূল। জেলায় ৮১ লক্ষ জনসংখ্যার প্রায় ৩৫ শতাংশ সংখ্যালঘু। ভাঙড় ক্যানিং পূর্ব, মগরাহাট পূর্ব-পশ্চিম, বারুইপুর পূর্ব-পশ্চিম সহ জেলার বেশ কিছু বিধানসভা কেন্দ্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, দুই সংখ্যালঘু রাজনৈতিক দল যদি জোট করে, তা হলে সংখ্যালঘু ভোট ভাগাভাগি হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শাসক দল ১০-১২টি আসনে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। এতে সুবিধা হবে বিজেপির, এমনই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। এই জেলায় গোষ্ঠীকোন্দল শাসক দলের অন্যতম মাথা ব্যথার কারণ। শাসক দলের দাবি, বিজেপিকে সুবিধা করে দিতেই ওই দুই সংখ্যালঘু দলের সঙ্গে গোপন আঁতাত তৈরি হয়েছে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল বিহার ভোটে।
বিজেপিকে সুবিধা করে দিতে মুসলিম ভোট এক জায়গায় আনার চেষ্টা করছেন তাঁরা, এ কথা অবশ্য মানেন না আসাদউদ্দিন বা আব্বাসরা। মুসলিমদের নিজস্ব দাবি-দাওয়া নিয়ে ভোটে লড়ে ভাল ফল করতে বদ্ধপরিকর তাঁরা। এ বিষয়ে ভাঙড় ১ ব্লকের আহলে সুন্নাতুল জামাতের সভাপতি মিন্টু শিকারি বলেন, ‘‘এমআইএমের সঙ্গে আমাদের জোট হলে রাজ্যের প্রায় ৭০-৮০টি আসনে আমাদের জয় নিশ্চিত। সরকার গড়ার ক্ষেত্রে আমাদের একটা আলাদা ভূমিকা থাকবে।’’
এমআইএম-সিদ্দিকি জোটকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না বিজেপি নেতারা। বিজেপির দক্ষিণ ২৪ পরগনা পূর্ব জেলার সভাপতি সুনীপ দাস বলেন, ‘‘এমআইএমের সঙ্গে আব্বাস সিদ্দিকির জোট হল কিনা, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। তৃণমূলের বিদায় ঘণ্টা বেজে গিয়েছে। মানুষ ওদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় ২০-২২টি আসনে আমাদের জয় নিশ্চিত।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার যুব তৃণমূলের সভাপতি তথা ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা বলেন, ‘‘ওদের জোট হলেও আমাদের কিছু যায় আসে না। আমাদের জেলা তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। এই জেলায় ওরা একটি আসনও পাবে না। মানুষ অনেক বেশি সচেতন। তারা কোনও ধর্মীয় শক্তিকে কখনওই মাথা চাড়া দিতে দেবে না।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তুষার ঘোষের পর্যবেক্ষণ, ‘‘এমআইএমের সঙ্গে আব্বাস সিদ্দিকির কত আসনে সমঝোতা হচ্ছে তা না দেখা পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে এটা ঠিক, সংখ্যালঘু ভোট ভাগাভাগি হলে তৃণমূলের আসন সংখ্যা অনেক কমে যাবে।’’