আশা: ক্যানিং থেকে ভাঙনখালি তৈরি হওয়ার কথা রেললাইন। তবে কোন পথে তা হবে, তার নির্দেশিকা এখনও আসেনি।
ক্যানিং-ঝড়খালি রেললাইনের দাবি দীর্ঘদিনের। লাইন সম্প্রসারণের জন্য বহু দিন থেকেই বিভিন্ন স্তরে আবেদন করে আসছেন সুন্দরবনবাসী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ক্যানিং-ভাঙনখালি পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার লাইন সম্প্রসারণের প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছিল। শুরু হয়েছিল মাতলা নদীর উপরে রেলসেতুর কাজ। কিন্তু পরে সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয় সুন্দরবনবাসীর। তাঁদের অভিযোগ, শুধু মাতলা নদীর উপরে রেলসেতুর পিলার ছাড়া আর কোনও কাজই হয়নি।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে রেললাইন সম্প্রসারণ নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের প্রাক্তন সদস্য তথা সমাজসেবী লোকমান মোল্লা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বিষয়টি দেখার জন্য রেলমন্ত্রকে নির্দেশ যায়। ১৮ জুলাই রেলমন্ত্রকের ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ কে ভৌমিক লোকমানকে চিঠি দিয়ে জানান, রেললাইন সম্প্রসারণের জন্য চূড়ান্ত সমীক্ষা হয়ে গিয়েছে। প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের জন্য অতিরিক্ত জেলাশাসককে (জমি অধিগ্রহণ) দায়িত্ব দেওয়া হবে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (জমি অধিগ্রহণ) মৃণালকান্তি রানো বলেন, ‘‘এর আগে আমাদের দফতর এবং রেলের যৌথ উদ্যোগে জরিপের কাজ হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রেলের তরফে এমন কোনও চিঠি আমরা পাইনি।’’ তবে চিঠির বিষয়টি তাঁর জানা বলে মন্তব্য করেছেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র। নতুন করে লাইন সম্প্রসারণ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন সুন্দরবনবাসী। লোকমান বলেন, ‘‘স্বাধীনতার ৭১ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও বিশ্বের ঐতিহ্যমণ্ডিত বাদাবন সুন্দরবনে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠল না। এটা সুন্দরবন এলাকার মানুষের কাছে যন্ত্রণার। অথচ এই লাইন হলে দক্ষিণ সুন্দরবনের মানুষের আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামো উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারত। পর্যটকেরাও রেলপথে সরাসরি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বাসভূমিতে পৌঁছতে পারতেন।’’ লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে সুন্দরবন কৃষ্টি ও লোকসংস্কৃতি মঞ্চে লক্ষাধিক সুন্দরবনবাসীর গণস্বাক্ষর সংবলিত আবেদনপত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল। ২০০৯ সালে তদানীন্তন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবকে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে বলেছিলেন। পরবর্তী সময়ে সরকার পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় এনডিএ সরকারের রেলমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি উদ্যোগী হয়ে ওই রেললাইন সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেন। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাওয়ায় ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
২০১৩ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর কাছে আবেদন করা হলে তিনি ক্যানিংয়ে এসে পরিদর্শন করেন। সে সময়ে তিনি বিষয়টি নিয়ে বিবেচনার আশ্বাস দেন। কিন্তু কাজ এগোয়নি। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের পরে আবারও গণস্বাক্ষর নিয়ে দিল্লিতে হাজির হন লোকমান। তিনি প্রাক্তন কৃষি ও সাংসদ বিষয়ক রাষ্ট্রমন্ত্রী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি লোকমানকে সঙ্গে নিয়ে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর কাছে নিয়ে যান। রেল বিভাগীয় দফতরকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেন। অভিযোগ ওঠে, কেন্দ্র-রাজ্যের টানাপড়েনে ওই কাজ থমকে আছে।