পানীয় জলের সমস্যা ভোগাচ্ছে দক্ষিণ বারাসতকে

দক্ষিণ বারাসত স্টেশন-সংলগ্ন গ্রাম বিবেকানন্দ পল্লি। সেখানকার বাসিন্দারা জানান, বেশ কয়েক বছর আগে গ্রামে পানীয় জল সরবরাহের জন্য পাইপলাইন পাতা হয়েছিল। কিছু দিন তাতে জল এসেও ছিল। পরেই তা বন্ধ হয়ে যায়।

Advertisement

সমীরণ দাস

জয়নগর শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৯ ০০:১৮
Share:

ভোগান্তি: জলের ড্রাম নিয়ে চলেছেন বাসিন্দারা। ছবি: সুমন সাহা

কোথাও পাতা হয়েছে পাইপলাইন, কিন্তু তাতে জল আসে না। কোথাও আবার সেটুকুও হয়নি। ভরসা বলতে নলকূপ। যদিও সেখান থেকে অধিকাংশ সময়ে অপরিষ্কার, আয়রন-যুক্ত পানের অযোগ্য জলই বেরোয় বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। বাধ্য হয়ে ড্রামবন্দি জল কিনেই কোনও রকমে চালিয়ে নিচ্ছেন মানুষজন। ছবিটা জয়নগরের দক্ষিণ বারাসত এলাকার একাধিক গ্রামের।

Advertisement

দক্ষিণ বারাসত স্টেশন-সংলগ্ন গ্রাম বিবেকানন্দ পল্লি। সেখানকার বাসিন্দারা জানান, বেশ কয়েক বছর আগে গ্রামে পানীয় জল সরবরাহের জন্য পাইপলাইন পাতা হয়েছিল। কিছু দিন তাতে জল এসেও ছিল। পরেই তা বন্ধ হয়ে যায়। পানীয় জলের জন্য ভরসা বলতে নলকূপ। সেখানেও সমস্যা। স্থানীয় বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘‘দু’টো নলকূপের একটা ব্যবহারের অযোগ্য। নোংরা জল বেরোয়। পঞ্চায়েতে জানিয়েও লাভ হয়নি। আর একটা কোনও রকমে চলছে। গ্রামবাসী ছাড়াও, পাশের রেল বস্তি-সহ আশেপাশের অনেকেই এটা থেকে জল নিতে আসেন। খুবই খারাপ পরিস্থিতি।’’ আর এক বাসিন্দা অজিতচন্দ্র নস্করের কথায়, ‘‘এত মানুষ অথচ একটা কল! বাধ্য হয়ে বেশিরভাগ মানুষ জল কিনে খাচ্ছেন। পাড়ায় পাড়ায় ২০ লিটার জলের ড্রাম দেদার বিক্রি হচ্ছে।’’

পাশের গ্রাম নতুন পল্লির অবস্থাও অনেকটা একই রকম। স্থানীয় বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামে পাইপলাইন ঢোকেইনি। নলকূপ আছে। কিন্তু সেই জলে আয়রন থাকায় অনেকেই তা খান না। বেশিরভাগ মানুষ জল কিনেই খান।’’

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এলাকার বহু জায়গাতেই ছবিটা এক। বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। কেনা জলই ভরসা। এই পরিস্থিতিতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বেআইনি জলের কারবারগুলিও। গ্রামে গ্রামে যে জল বিক্রি হচ্ছে, তার বেশিরভাগেরই কোনও বৈধতা নেই। ভূগর্ভস্থ জল তুলে কোনও রকমে তা পরিশোধন করে বিক্রি হচ্ছে। ২০ লিটার জল পাওয়া যাচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। প্রায় প্রতি ঘরেই ব্যবহৃত হচ্ছে এই জল।

পরিবেশবিদরা বলছেন, অবৈধ ভাবে ভূগর্ভস্থ জল তোলার ফলে জলস্তর কমে অচিরেই বড় বিপদ দেখা দিতে পারে। কিন্তু এ নিয়ে ভ্রূক্ষেপ নেই কোনও পক্ষেরই। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘জলের ব্যবস্থা নেই বলেই মানুষ বাধ্য হয়ে জল কিনছেন। প্রশাসন যদি পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে, তা হলে ড্রামবন্দি এই জলের চাহিদাও কমবে।’’

কী বলছে প্রশাসন?

দক্ষিণ বারাসত পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অরুণ নস্কর বলেন, ‘‘এলাকার বেশ কিছু জায়গায় জলের সমস্যা রয়েছে। গোটা এলাকায় যাতে পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা যায় সে জন্য আমরা বিধায়ক, সাংসদের কাছে আর্জি জানিয়েছি। তাঁরা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন।’’ তিনি আরও জানান, আপাতত যে যে নলকূপ থেকে আর্সেনিক-যুক্ত জল বেরোচ্ছে সেগুলিকে চিহ্নিত করে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। পঞ্চায়েতের তরফে নতুন নলকূপও বসানো হচ্ছে। পুরনো নলকূপগুলির সংস্কার হচ্ছে।

স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস বলেন, ‘‘শুধু দক্ষিণ বারাসতেই নয়, বহড়ু, দুর্গাপুর, হরিনারায়ণপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় পাইপলাইনে জল সরবরাহের জন্য সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর কর্তৃক ১৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। খুব তাড়াতাড়িই কাজ শুরু হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement