উপাসনা: বনবিবির মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে।
কুঁড়ে নদীর চরে ছোট্ট মাটির ঘর। খড়ের চালের সেই ঘরই বনবিবির মন্দির। এলাকার মানুষ নদী-খাঁড়িতে মাছ-কাঁকড়া ধরতে যাওয়ার আগে পুজো দিয়ে যান এখানে। হেমনগর থানার প্রত্যন্ত সামসেরনগরের অখ্যাত জঙ্গলঘেরা এই বনবিবির মন্দিরই রাতারাতি উঠে এসেছে খবরের শিরোনামে।
মঙ্গলবার সামসেরনগরে এসে বনবিবির এই মন্দিরে পুজো দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। মাটির ঘর-খড়ের চালের মন্দির পাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অখ্যাত এই মন্দিরকে ঘিরে এলাকার পর্যটনে উন্নতির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
হিঙ্গলগঞ্জ সফরে এসে বনবিবি মন্দিরে পুজো দেবেন মুখ্যমন্ত্রী, সে কথা আগেই জানিয়েছিল প্রশাসন। সেই মতো সামসেরনগর ৪ নম্বর স্লুস গেটের কাছে মন্দিরটিকে প্রস্তুত করা হয়েছিল। বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ আসেন মুখ্যমন্ত্রী। পুজো দেওয়ার পাশাপাশি মন্দির চত্বরে একটি কাঁকড়া গাছ রোপণ করেন। মন্দিরের সামনে থাকা একটি টক কেওড়া গাছকেও পুজো দেন।
মন্দিরের পুরোহিত সন্তোষ মণ্ডল বলেন, “এই মন্দিরে মুখ্যমন্ত্রী আসবেন, ভাবতেই পারিনি। আমরা গ্রামের মানুষ। মুখ্যমন্ত্রীর মতো একজনের সঙ্গে কী ভাবে কথাবার্তা বলব, তা ভেবে চিন্তায় ছিলাম। তবে উনি দিব্যি মানিয়ে নিলেন। কোনও অসুবিধা হয়নি।”
পুরোহিত জানান, এই মন্দিরের বয়স একশো বছর পেরিয়েছে। মদন মণ্ডল নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির উদ্যোগে মন্দির গড়া হয়েছিল। পরে ক্রমশ সর্বসাধারণের মন্দির হয়ে ওঠে। এলাকার মৎস্যজীবীরা বিশ্বাস করেন, জঙ্গলে বিপদ থেকে বনবিবিই তাঁদের রক্ষা করবেন।
মুখ্যমন্ত্রীর পাকা মন্দির গড়ে দেবেন, এই আশ্বাসে খুশি এলাকার মানুষ। সন্তোষ বলেন, “উনি আশ্বাস দিয়েছেন, দ্রুত পাকা মন্দির হবে এবং মন্দির চত্বর পাঁচিল ঘেরা হবে। আমাদের বিশ্বাস, এরপরে অনেকেই এই মন্দির দেখতে আসবেন।” স্থানীয় বাসিন্দা নমিতা মণ্ডল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যখন বলেছেন, নিশ্চয়ই দ্রুত পাকা মন্দির হবে। এই চত্বরে কোথাও পাকা বনবিবির মন্দির নেই। পাকা মন্দির হলে জায়গাটার একটা পরিচিতি হবে। পর্যটকেরাও আসবেন।”
তবে মন্দির পাকা হলেও পর্যটনে উন্নতি নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। স্থানীয় বাসিন্দা পবিত্র মণ্ডল বলেন, “শুধু মন্দির সংস্কার করলে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে বলে মনে হয় না। সামসেরনগর থেকে দুলদুলি পর্যন্ত প্রধান রাস্তা বেহাল। তা সংস্কার করা আগে দরকার। রাস্তা চওড়া হওয়া দরকার। না হলে পর্যটকদের ভোগান্তি। সন্ধ্যার পরে রাস্তায় আলো থাকে না। আলো দিয়ে সাজালে পর্যটকেরা আকৃষ্ট হবেন।”