পড়ে রয়েছে শব্দবাজি। ছবি: সুজিত দুয়ারি
এত ধরপাকড়ের পরেও লক্ষ্মীপুজোর রাতে হাবড়ায় ফাটল শব্দবাজি।
গত তিন বছর ধরে পুলিশ, প্রশাসন, পুরসভার লাগাতার প্রচার ও ধরপাকড়ের ফলে পরিস্থিতির কিছুটা বদলাবে বলে মনে করছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু শহরের দুর্নাম আর ঘুচল কই!
সারারাত শব্দবাজির তাণ্ডব চলল হাবড়া শহরে। আতঙ্কে কাটালেন বাসিন্দারা। রবিবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শহর এলাকায় ফাটল দেদার শব্দবাজি। বাসিন্দারা জানালেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বার শব্দবাজি ফেটেছে অনেক বেশি। শহরের পাশাপাশি হাবড়ার গ্রামীণ এলাকা থেকে শব্দবাজি ফাটার আওয়াজ পাওয়া গিয়েছে।
এ দিন রাতে অনেকেই শহরের রাস্তায় বেরিয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। বহু মানুষ আবার ভয়ে সন্ধ্যার পর থেকে নিজেদের বাড়িতে গৃহবন্দি করে রেখেছিলেন। বাসিন্দারা জানালেন, সন্ধ্যা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত বেশি বাজি ফেটেছে। প্রবীণ বাসিন্দার কথায়, ‘‘শব্দবাজির আওয়াজ বুকে এসে লাগছিল। সারা রাত ঘুম হয়নি।’’
সব মিলিয়ে শহরবাসীর মনে পুরনো স্মৃতি উঁকি দিয়েছে। বাসিন্দাদের বেশির ভাগই লক্ষ্মীপুজোর রাতে খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতেন না। রাস্তাঘাট কার্যত জনশূন্য থাকত। বাতাসে ছড়িয়ে পড়ত বারুদের গন্ধ। রাস্তা কালো ধোঁয়ায় ভরে যেত। বাড়ির দরজা জানালা বন্ধ করে রাখতে হত। এ বারেও সেই দৃশ্যই দেখলেন এলাকাবাসী।
হাবড়া বাজার, কামারথুবা, হাটথুবা, আশুতোষ কলোনি, আক্রামপুর, ইতনা কলোনি, ডহরথুবা, বাণীপুর, প্রফুল্লনগর, কইপুকুর, প্রফুল্লনগর, শ্রীনগর, চোংদা, জয়গাছি, নাংলা, বাউগাছি, কুমড়া, গোয়ালবাটি-সহ গোটা এলাকায় শব্দবাজি ফেটেছে। রবিবার রাতে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়েও রোগীর আত্মীয়রা বাজির কান ফাটানো আওয়াজ পেয়েছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘শব্দবাজির আওয়াজে রোগীরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’’ বাড়িতে পোষা কুকুর-বিড়াল সারা রাত ভয়ে দাপাদাপি করেছে। সব থেকে সমস্যায় পড়েছিলেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘এ দিন রাতে কয়েকটি বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোর নিমন্ত্রণ ছিল। শব্দবাজির তাণ্ডবে ভয়ে বাড়ি থেকে বেরোনোর সাহস পায়নি।’’
শব্দবাজির দাপট কমাতে গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্মীপুজোর আগে পুরসভা পদক্ষেপ করছিল। বৈঠক করে ব্যবসায়ীদের শব্দবাজি বিক্রি না করতে নির্দেশ দেওয়া হত। পুরসভা ও পুলিশের তরফে শব্দবাজি বিক্রি ও ফাটানো বন্ধ করতে মানুষকে সচেতন করতে লাগাতার প্রচারও চালানো হয়েছিল। সেই সঙ্গে চলেছে ধরপাকড়। পুলিশের তরফে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বোঝানো হয়েছিল। এ সবের ফলে শব্দবাজির তাণ্ডব কমেছিল কিছুটা।
কিন্তু এ বার পুরসভার তরফে তেমন কোনও পদক্ষেপ শহরবাসীর চোখে পড়েনি। পুরসভায় এখন প্রশাসক বসেছে। শহরবাসীর বক্তব্য, ‘‘পুর পরিষেবা ঠিক মতো মিলছে না। এ বার শব্দবাজি ফাটা বন্ধ করা নিয়েও পুরসভার কোনও হেলদোল ছিল না। সে কারণেই আরও বেশি করে ফেটেছে।’’
তবে পুলিশের তরফে লক্ষ্মীপুজোর আগে থেকে পুলিশ ধরপাকড় চালিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৫০ কেজি শব্দবাজি উদ্ধার করা হয়েছিল। রবিবার রাতে আইসি গৌতম মিত্রের নেতৃত্বে পুলিশ গোটা এলাকায় টহল দিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাতে শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগে ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ কর্তারা মনে করছেন, মানুষকে সচেতন হতে হবে। এ কথা শহরবাসীর একাংশও মনে করেন। তাঁদের কথায়, ‘‘পুলিশ পুরসভাকে দায়ী করে আমরা আমাদের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে পারি না। কারণ এই শহরের মানুষেরাই তো শব্দবাজি ফাটাচ্ছেন। বাইরে থেকে কিনে এনে গোপনে বাড়িতে মজুত করে রাখছেন। শহরের মানুষের বিবেক জাগ্রত না হলে শাপমুক্তি হওয়া সম্ভব নয়।’’