বিপন্ন সুন্দরবন, ম্যানগ্রোভ ধ্বংস নিয়ে অভিযোগ রাজনৈতিক মদতের

বাসন্তী ব্লক এলাকায় ভরতগড়ের আনন্দবাদ, ভাঙনখালি, চোরা ডাকাতিয়া, কুমিরমারি, পুরন্দরে মাতলা নদীর চরের ম্যানগ্রোভ অনেক দিন ধরেই কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের।

Advertisement

সামসুল হুদা ও প্রসেনজিৎ সাহা

ভাঙড় ও ক্যানিং শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৯ ০২:০৯
Share:

নিধন: সাফ হয়ে যাচ্ছে ম্যানগ্রোভ। নিজস্ব চিত্র

কোথাও ম্যানগ্রোভ কেটে তৈরি হচ্ছে মেছোভেড়ি। কোথাও কাঠ কেটে জ্বালানির কাজে লাগানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে চোরাগোপ্তা কেটে ফেলা হচ্ছে নদীর চরের ম্যানগ্রোভ। ফলে বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে চলেছে সুন্দরবন।

Advertisement

বাসন্তী ব্লক এলাকায় ভরতগড়ের আনন্দবাদ, ভাঙনখালি, চোরা ডাকাতিয়া, কুমিরমারি, পুরন্দরে মাতলা নদীর চরের ম্যানগ্রোভ অনেক দিন ধরেই কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক বন্দনা পোখরিয়াল বলেন, ‘‘যখনই খবর আসে ম্যানগ্রোভ গাছ কাটা হচ্ছে, তখনই ব্লক প্রশাসন বন দফতরকে জানায়। এ বিষয়ে ব্লক প্রশাসন, বন দফতর ও স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।’’

কিন্তু মাঝে মধ্যে খুচরো দু’চার জন কাঠচোর ধরা পড়লেও ম্যানগ্রোভ ধ্বংস যে পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না, সে কথা বার বার বলছেন সুন্দরবনবাসী। আয়লার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতায় তাঁরা শিখেছেন, ম্যানগ্রোভের প্রয়োজনীয়তা। কিন্তু কাঠ চুরি বন্ধ হচ্ছে কই!

Advertisement

দখল: গাছ কেটে তৈরি হচ্ছে মাছের ভেড়ি। নিজস্ব চিত্র

সম্প্রতি ঝড়খালিতে বন দফতরের অনুষ্ঠানে জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল বাসন্তী ব্লক এলাকায় ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করে বেআইনি মেছোভেড়ি তৈরি করা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন বনমন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সামনে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতি যে খুব একটা বদলাচ্ছে না, সে কথা বার বার বলছেন সুন্দরবনবাসী।

বনসৃজন প্রকল্পে সুন্দরবন এলাকার বিভিন্ন পঞ্চায়েত বছরের নানা সময়ে নদীর চরে ম্যানগ্রোভ লাগিয়ে থাকে। সুন্দরবনের মাতলা, বিদ্যা, হোগল নদী-সহ বিভিন্ন নদীর চরে ম্যানগ্রোভ চারা লাগিয়েছিল সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ। আয়লা পরবর্তী সুন্দরবনে সরকারি ভাবে বিভিন্ন প্রকল্পে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে নদীর চরের ওই সব ম্যানগ্রোভ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, সরকার যেখানে সবুজায়ন প্রকল্পে চারিদিকে বৃক্ষরোপণ করছে, সেখানে এক শ্রেণির অসাধু মানুষের কারণে বাসন্তী ব্লকের নদীর চরের ম্যানগ্রোভ দিনের পর দিন ধ্বংস হচ্ছে। প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর জানান, পরিবেশকে বাঁচাতে হলে সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে রাখা দরকার। কিন্তু যে ভাবে দিনের পর দিন ম্যানগ্রোভ গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে, তাতে সুন্দরবন দিন দিন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘‘বাসন্তী ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় নদীর চরের ম্যানগ্রোভ গাছ কেটে তৈরি করা হচ্ছে মেছোভেড়ি। অথচ কারও কোনও হেলদোল নেই। প্রশাসনের সমস্ত স্তরে জানিয়েও কাজ হচ্ছে না।’’

ক্যানিং, বাসন্তী ও গোসাবা ব্লক জুড়ে ম্যানগ্রোভ কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ। ক্যানিংয়ের নিকারিঘাটা পঞ্চায়েতের ডাবু এলাকায় দেদার কাটা হচ্ছে ম্যানগ্রোভ। বিঘের পর বিঘে জমির ম্যানগ্রোভ কেটে তৈরি হচ্ছে ভেড়ি। নিকারিঘাটা পঞ্চায়েত প্রধান তাপসী সাঁফুই বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। সেই চেষ্টা চলছে।”

যারা এই ম্যানগ্রোভ কেটে ভেড়ি করছে, তারা তৃণমূলের ছত্রচ্ছায়ায় আছে বলে অভিযোগ উঠছে।

সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল বলেন, ‘‘ঝড়খালির অনুষ্ঠানে এলাকার সাংসদ হিসেবে সুন্দরবন ও ম্যানগ্রোভ রক্ষা করার জন্য বনমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছিলাম। উনি সে সময়ে দফতরের আধিকারিক ও পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেন। কিছু দিন গাছ কাটা বন্ধ হয়েছিল। তবে নতুন করে আবার ম্যানগ্রোভ হত্যা শুরু হয়েছে কিনা তা জানা নেই। এ বিষয়ে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, সে সম্পর্কে বন দফতরের আধিকারিক ও স্থানীয় বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলব।”

দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনবিভাগের ডিএফও সন্তোসা জিআর বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগ পেয়ে ইতিমধ্যেই অনেকগুলি জায়গায় আইনি ব্যবস্থা নিয়েছি। নতুন অভিযোগ পেলে আবারও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ বাসন্তীর বিডিও সৌগত সাহা জানিয়েছেন, বন দফতরকে এ নিয়ে বার বার চিঠি লিখেছেন। বন দফতর গাছ কাঠ বন্ধে উদ্যোগী হয়েছে। কিন্তু তবুও প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে কেউ কেউ এই কাজ করছে। তাঁর মতে, এলাকার মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। তা হলে এই সমস্যা পুরোপুরি মিটবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement