বিপাকে মাছে-ভাতে বনগাঁবাসী

বেড়ে যাচ্ছে মাছের দাম

বনগাঁ ট বাজারের এক মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘বসিরহাটের এই গণ্ডগোলের জন্য মাছের জোগান কমে গিয়েছে। আর ঘুরপথে যে সব মাছ বাজারে আসছে, তার দাম বেশি।’’

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৭ ০১:৪৩
Share:

ভিড়-নেই: বনগাঁর ট বাজারে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

বাড়িতে লোকজন এসেছেন। ইচ্ছা ছিল নানা রকমের মাছ রান্না করার। তাই সকালেই বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে বেরিয়েছিলেন বনগাঁর বাসিন্দা অমৃতা প্রামাণিক। কিন্তু বাজারে গিয়ে মাছের দাম শুনে তাঁর চক্ষু চড়কগাছ! শেষমেশ মুরগির মাংস দিয়ে কাজ চালাতে হল।

Advertisement

বনগাঁর বড় মাছের বাজারগুলিতে এখন আকাশ ছোঁয়া দাম চলছে। কারণ, অশান্ত বসিরহাট।

বনগাঁ ট বাজারের এক মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘বসিরহাটের এই গণ্ডগোলের জন্য মাছের জোগান কমে গিয়েছে। আর ঘুরপথে যে সব মাছ বাজারে আসছে, তার দাম বেশি।’’

Advertisement

দিন কয়েক ধরেই অশান্ত বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন এলাকা। তারই প্রভাব পড়েছে বনগাঁর মাছের বাজারগুলিতে। বিভিন্ন বাজারের মাছ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বনগাঁর মাছের বাজারগুলিতে মাছ আসে বসিরহাটের বিভিন্ন এলাকা থেকে। কিন্তু এই ঘটনার জেরে এখন মাছ আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সামান্য কিছু মাছ ঘুরপথে আসছে বটে। কিন্তু তা ১০০-১৫০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা সাধারণ মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব হচ্ছে না। বিক্রেতারা জানান, ‘‘ঘুরপথে মাছ আসার ফলে পরিবহণ ও বরফের খরচ বেড়ে গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এতে দাম বেশি হয়ে যাচ্ছে।’’

বাজারগুলিতে গিয়ে দেখা গেল, মাছের দোকানে ভিড় কম। অজিত হালদার, জয়দেব হালদার, পুলিন হালদারের মতো মাছ বিক্রেতারা জানান, বসিরহাট থেকে মূলত চিংড়ি, তেলাপিয়া, ভেটকি, পারসে, ট্যাংরা মাছ আসে। কিন্তু এখন তা বন্ধ। ব্যবসায়ীরা জানালেন, দিন দশেক আগেও বনগাঁর ট বাজার থেকে পারসে, ভেটকি ৪০০-৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন তার দাম কিলো প্রতি ৬০০ টাকা। চিংড়ি বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকায় এখন তা ৫০০ টাকা কিলো। ট্যাংরা বিক্রি হচ্ছিল ৩০০- ৪০০ টাকায়। এখন তা ৫০০ টাকা কিলো।

খয়রামারি এলাকার বাসিন্দা স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘দিন আটেক আগেও যে ট্যাংরা মাছ ৩০০ টাকা কেজি দরে কিনেছি। এখন তা কিনতে হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজিতে। পরিবাবের চাহিদা অনুয়াযী মাছ কেনা সম্ভব হচ্ছে না।’’ বনগাঁ শহরের অন্যতম বড় বাজার নিউ মার্কেট। সেখানকার মৎস্য ব্যবসায়ী অনুপ হালদার বলেন, ‘‘বসিরহাট থেকে মাছ আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাজারে ক্রেতার সংখ্যাও কমে গিয়েছে। স্থানীয় মাছের দামও বেড়ে গিয়েছে। রুই কাতলার দামও বেড়েছে।’’ বসিরহাটের বিভিন্ন এলাকায় ভেড়ি জলাজমিতে গলদা চিংড়ি, বাগদা চিংড়ি, তেলাপিয়া, ভেটকি চাষ হয়। ওই সব মাছই বনগাঁর বাজারের অন্যতম ভরসা বলে জানালেন মাছ বিক্রেতারা।

রোজ সকালে বড় বড় বাজার থেকে মাছ কিনে পাড়ায় পাড়ায় ফেরি করেন কিছু মৎস্যজীবী। কয়েক দিন হল পাড়ায় পাড়ায় মাছ আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সবিতা মল্লিক নামে এক স্কুল শিক্ষিকা জানালেন, সকালে ব্যস্ততার কারণে বাজারে যাওয়া হয় না। পাড়ায় আসা মাছ বিক্রেতাদের কাছ থেকে মাছ কিনতাম। সে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন পাড়ার দোকান থেকে ডিম কিনে খেতে হচ্ছে।’’

বহু দিন হল বাংলাদেশ থেকে ইলিশ মাছ আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বর্ষার মরসুমে তাই বনগাঁ ও সংলগ্ন এলাকার মানুষের ভরসা বসিরহাটের মাছ। কিন্তু এখন তা-ও বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিপাকে পড়েছেন মাছে-ভাতে বনগাঁবাসী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement