বেহাল পরিকাঠামো এখানেই। — নিজস্ব চিত্র
বেলা সাড়ে ১২টাতেও হাসপাতাল চত্বরে রোগীর দেখা নেই। জরুরি বিভাগে শুধু এক জন নার্স। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সাইনবোর্ডটি না থাকলে বোঝাই যাবে না, এটি কোনও হাসপাতাল।
কুলপি ব্লকের জামতলাহাট প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবস্থা অনেক দিন ধরেই এমন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী। এক জন চিকিৎসক রয়েছেন বটে, কিন্তু তাঁর উপরে অন্য একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরও দায়িত্ব রয়েছে। সপ্তাহের কয়েকটি দিন তাঁকে সেখানে বসতে হয়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকলে চিকিৎসাভার তুলে নিতে হয় নার্সকে। মাঝে মধ্যে এই দায়িত্ব পড়ে ফার্মাসিস্টের উপরেও। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী বা সাফাইকর্মী নেই হাসপাতালে।
ওই ব্লকের কেওড়াতলা পঞ্চায়েতে বহু বছর আগে জামতলাহাটের কাছে বিঘা আটেক জমিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তৈরি হয়েছিল। সে সময়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য ছ’টি আবাসন তৈরি হয়। কয়েক বছর চলার পরে চিকিৎসক ও কর্মীর অভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি মুখ থুবড়ে পড়ে। ওই ছ’টি ভবনের কয়েকটি পরিত্যক্ত। এরই একটি ভবনে চলছে জরুরি স্বাস্থ্য পরিষেবার কাজ। জরাজীর্ণ সেই ভবনের দেওয়াল ও ছাদের চাঙড় খসে পড়েছে। কেওড়াতলা পঞ্চায়েত ছাড়াও ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভর করেন বাবুরমহল, শ্রীনগর, কাকদ্বীপ ব্লকের নেতাজি ও বাপুজি পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা। এখন এই কেন্দ্রে সপ্তাহে ২-৩ দিন বসেন চিকিৎসক। ওই ক’দিন বহির্বিভাগে দু’আড়াইশো জনের ভিড় হয়। বাকি দিনগুলিতে রোগীর সংখ্যা হাতেগোনা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টো পর্যন্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা থাকে। এলাকাটি প্রত্যন্ত হওয়ায় রাতে কোনও রোগীর জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তাঁকে নিয়ে যেতে হয় ২০ কিলোমিটার দূরে কুলপি গ্রামীণ হাসপাতাল বা ৪০ কিলোমিটার দূরের ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে। স্থানীয় বাসিন্দা তিমির হালদারের অভিযোগ, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো দরকার হাসপাতালে। একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে গ্রামবাসীদের স্বাক্ষর-সহ স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হাসপাতালের চিকিৎসক সমরেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সমস্যার বিষয়ে যা বলার বিএমওএইচ বলবেন।’’
কুলপির বিএমওএইচ আবু সালে মহম্মদ মেহফুজউল করিম বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও কর্মীর জন্য বহুবার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনও তরফেই কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। এখন যে ভবনে বহির্বিভাগের কাজ চলছে, সেটিও জরাজীর্ণ অবস্থায়।’’ কুলপির বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ হচ্ছে। এর পরে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা হবে।