ঝুঁকি: ভাঙা রাস্তা দিয়েই চলছে নিত্যযাত্রা। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়
ডেঙ্গি, অজানা জ্বরের প্রকোপ শুরু হয়েছে বারাসত, দেগঙ্গা, বাদুড়িয়া-সহ আশপাশের এলাকায়। ইতিমধ্যেই মৃত্যুর খবর আসাও শুরু হয়ে গিয়েছে। এ দিকে, স্থানীয় এলাকা ও হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুল্যান্স এবং গাড়িতে রোগীদের আনা হচ্ছে বারাসত ও কলকাতার হাসপাতালে। কিন্তু খানাখন্দে ভরা বারাসত-টাকি রোডের হাল এমনই যে ওই রাস্তায় গাড়ি চলাচল কার্যত দুষ্কর। শুকনো আবহাওয়ায় ভাঙাচোরা ওই রাস্তায় ধুলোর ঝড় ওঠে। আবার বৃষ্টি হলে খন্দে জল জমে ঘটছে দুর্ঘটনা। রাস্তা সারাইয়ের দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় চলছে অবরোধও করছেন মানুষ। তবুও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা।
রাস্তার অবস্থা এতটাই বেহাল যে বুধবার দেগঙ্গায় প্রশাসনিক বৈঠকে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন খোদ উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক অন্তরা আচার্য। বৈঠকে উপস্থিত জেলা পূর্ত দফতর ও ব্লক প্রশাসনিক আধিকারিককে কড়া ভাষায় তিনি নির্দেশ দেন, যত দ্রুত সম্ভব বারাসত-টাকির রাস্তা মেরামত করতে হবে। কারণ এক দিকে যেমন জ্বর ও ডেঙ্গির রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে আসতে হচ্ছে, অন্য দিকে তেমনই জন্মাষ্টমী, লোকনাথ উৎসবে অসংখ্য মানুষ এ পথ দিয়েই জল নিয়ে যাবেন।
বেহাল রাস্তা সারাইয়ের দাবিতে বৃহস্পতিবারেও কয়েক দফায় বারাসত-টাকি রোডের বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ করেন মানুষ। অবরোধকারীদের অভিযোগ, রাস্তা যখন চলাচলের অবস্থাতেই নেই, তা হলে তা বন্ধই থাক। সইফুল ইসলাম নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বারাসত থেকে বেড়াচাঁপা আসতে চার গুণ সময় লাগছে। গাড়ি চালানোই যাচ্ছে না। ডেঙ্গি, জ্বরে অসুস্থ রোগীদের নিয়ে খানাখন্দে পড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে হচ্ছে। সেই ঝাঁকুনিতে রোগীর স্যালাইনও ছিটকে যাচ্ছে।’’
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বারাসত-টাকি রোডে সম্প্রসারণের চললেও তার গতি খুবই শ্লথ। যেটুকু অংশে কাজ হয়েছে সেখানেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় ফের বেহাল দশা হয়েছে রাস্তার। ধুলোয় পথচারীরা নাজেহাল হচ্ছেন, পার্শ্ববর্তী দোকান, বাড়িও ঢেকে যায় ধুলোয়।
ওই রাস্তার পাশে দেগঙ্গা বাজারে এক চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে দেখা গেল জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ভিড়। আরিফ মণ্ডল নামে এক জন বলেন, ‘‘রাস্তার ধুলো উড়ে আসছে চেম্বারে। এক দিকে জ্বরের কষ্ট, অন্য দিকে ধুলো থেকে বাঁচতে নাক-মুখ চাপা দিয়ে থাকতে হচ্ছে।’’ সঞ্জয় পাল নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘রাস্তার ধুলো দোকানে আসায় ক্রেতারাও দাঁড়াতে পারছেন না। প্রশাসন ঠিক মতো জলও ছড়াচ্ছে না।’’
জেলার পূর্ত দফতরের আধিকারিক রাজা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কদম্বগাছি থেকে বেড়াচাঁপা পর্যন্ত রাস্তার সম্প্রসারণ চলছে। মেরামতি ও ধুলো আটকাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ঠিকা সংস্থাকে বলা হয়েছে।’’
এলাকার সাধারণ মানুষ জানাচ্ছেন, ‘ব্যবস্থা নেওয়া’র এই প্রতিশ্রুতি শুনতে শুনতে ক্লান্ত তাঁরা।