তহবিলে টান পড়ায় অনেক পঞ্চায়েত সময়মতো বিদ্যুতের বিল মেটাতে পারছে না। প্রতীকী চিত্র।
নানা কারণে পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিলে টান পড়েছে। তার ফলে বকেয়া পড়ছে বিদ্যুতের বিলও। এই পরিস্থিতির কথা জানাচ্ছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কয়েকটি পঞ্চায়েতের প্রধান। তাঁদের মতে, মূলত পঞ্চায়েতগুলির নিজস্ব আয় না বাড়ার ফলেই এই সমস্যা। এক পঞ্চায়েত প্রধানের কথায়, ‘‘পঞ্চায়েতের নিজস্ব আয় বেশি হত ট্রেড লাইসেন্স থেকে। কিন্তু এখন ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে অনলাইনে। ফলে আয় কমেছে। আগে আমরা ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার বিনিময়ে অনুদান নিতাম। এখন তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আয় কমেছে কয়েকগুণ। এর প্রভাব পড়েছে নিজস্ব তহবিলের ভাঁড়ারে।’’
বিদ্যুতের বিল মেটানো-সহ পঞ্চায়েতের ছোটবড় খরচ মেটানো হয় নিজস্ব তহবিল থেকে। তহবিলে টান পড়ায় অনেক পঞ্চায়েত সময়মতো বিদ্যুতের বিল মেটাতে পারছে না বলে জানা গেল।
বাগদা ব্লকের হেলেঞ্চা পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলের চায়না বিশ্বাস বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল কার্যত শূন্য। অস্থায়ী কর্মীদের ঠিকমতো বেতন দিতে পারছি না। ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে অনলাইনে। মানুষ বাড়ি বসে অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণ করতে পারছেন। ফলে আমরা টাকা পাচ্ছি না। কিছু করের উপরে নির্ভর করে চলতে হচ্ছে।’’ বিদ্যুতের বিল প্রতি মাসে দেওয়া হয় জানিয়ে প্রধান বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত অফিসের বিদ্যুৎ বিল মাত্র একমাস বাকি। হাইমাস্ট আলোর বিল নিজস্ব ফান্ড থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা মিটিয়ে দিয়েছি। তবে রাস্তার আলোর ক্ষেত্রে মিটার পাইনি। বিলও পাইনি।’’
এক পঞ্চায়েত প্রধানের অভিযোগ, দুয়ারে সরকার কর্মসূচির জন্য তাদের প্রচুর টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমার এলাকায় যে সব শিবির হয়েছে, সে জন্য ব্যানার, টিফিন ও পানীয় জলের ব্যবস্থা আমাদের করতে হয়েছে। ফলে নিজস্ব তহবিল বলে আর কিছু থাকছে না।’’ কয়েক মাসের বিদ্যুতের বিল বাকি আছে বলে মেনে নিলেন তিনি। আষাঢ়ু পঞ্চায়েতের প্রধান সরস্বতী মুন্ডা বলেন, ‘‘আমার এলাকায় গরিব আদিবাসী পাড়ুই সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা বেশি। তাঁরা মূলত খেতমজুরি, দিনমজুরি করেন। তাঁরা সব ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে কর জমা দিতে পারেন না। ফলে নিজস্ব তহবিলের অবস্থা ভাল নয়। পঞ্চায়েত অফিস, ডাকঘর, আরআই অফিসের প্রায় ৪ মাসের বিদ্যুৎ বিল বাকি আছে। তবে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা দিয়ে হাইমাস্ট আলোর বিল দেওয়া হয়েছে।’’
সিন্দ্রাণী পঞ্চায়েতের প্রধান সৌমেন ঘোষ জানালেন, পঞ্চায়েত ভবনের বিদ্যুতের বিল বাকি নেই। এলাকায় কয়েকটি হাই মাস্ট আলো আছে। সে জন্য প্রায় ১ লক্ষ টাকার বিদ্যুতের বিল বাকি। সৌমেন বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিলের অবস্থা খারাপ। আগে যে ট্রেড লাইসেন্স বাবদ ২১০০ টাকা পেতাম, এখন অনলাইনে হয়ে যাওয়ায় পাচ্ছি ২৫০ টাকা। আবার যে ট্রেড লাইসেন্স বাবদ পেতাম ৫০০ টাকা, এখন পাচ্ছি ৫০ টাকা।’’
বাগদার বিডিও সৌমেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রথমে কেন্দ্র ও পরে রাজ্য থেকে চিঠি এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, এখন থেকে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের আনটায়েড বা শর্তবিহীন টাকা বিদ্যুতের বিল মেটানোর কাজে ব্যয় করা যাবে। ব্লকের পঞ্চায়েত প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করে বলে দেওয়া হয়েছে, বিদ্যুতের বিল পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের শর্তবিহীন টাকায় পরিশোধ করতে পারবেন। কয়েকটি পঞ্চায়েত ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। পঞ্চায়েত প্রধানদের আবারও চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’
তবে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকায় বিদ্যুতের বিল মেটাতে গিয়ে কয়েকটি সমস্যার কথা জানিয়েছেন কোনও কোনও পঞ্চায়েত প্রধান। তাঁদের মতে, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা কোনও খাতে খরচ করতে হলে এক বছর আগে প্রকল্প (স্কিম) তৈরি করে জমা দিতে হয়। ফলে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের আগে ওই টাকা বিদ্যুতের বিল মেটানোর কাজে খরচ করা যাবে না। তা ছাড়া, প্রধানেরা ওই বিষয়ে কোনও লিখিত সরকারি নির্দেশ পাননি বলেও জানিয়েছেন। বিডিও বলেন, ‘‘পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকায় বিদ্যুতের বিল মেটানোর কাজে একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে তা শীঘ্রই মিটিয়ে ফেলা হবে।’’