Ichamati River

ওভারলোডিং চলছে, ভোগান্তি শহরবাসীর

বসিরহাট শহরে ইছামতী সেতুর উপর দিয়ে নিয়মিত চলছে ওভারলোডিং ট্রাক। শুক্রবার এমনই দু’টি ট্রাকের চাকা ভেঙে রাস্তা আটকে যাওয়ায় যানজট ছড়াল বহু দূর পর্যন্ত।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:০৮
Share:

বিপত্তি: ট্রাক বিকল হওয়ায় আটকে পড়েন বহু নিত্যযাত্রী। নিজস্ব চিত্র

ট্রাকের মাথা ছাড়িয়ে উচুঁ হয়ে আছে পাথর। শহরের অপরিসর পথ বেয়ে সে ছুটেছে তীব্র গতিতে। ভয়ে একপাশে সরে যাচ্ছেন পথচারী।

Advertisement

বসিরহাট শহরে ইছামতী সেতুর উপর দিয়ে নিয়মিত চলছে ওভারলোডিং ট্রাক। শুক্রবার এমনই দু’টি ট্রাকের চাকা ভেঙে রাস্তা আটকে যাওয়ায় যানজট ছড়াল বহু দূর পর্যন্ত। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতে যেতে নাকাল হয়েছেন মানুষ। রোগীকে নিয়ে সময় মতো হাসপাতালে পৌঁছতে না পেরে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওভারলোডিংয়ের সমস্যার কথা নতুন করে উঠে আসছে শহরবাসীর মুখে। একে তো ভারী গাড়ি চলায় রাস্তা ভাঙছে, তার উপরে বাড়ছে বিপদের আশঙ্কা। তবু প্রশাসনের নজর নেই বলে অভিযোগ মানুষজনের।

বসিরহাট পুলিশ জেলার সুপার কঙ্করপ্রসাদ বাড়ুই বলেন, ‘‘সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কোনও ভাবেই ওভারলোডিং বরদাস্ত করা হবে না। অতিরিক্ত মাল ভর্তি ট্রাক দেখলে মামলা করা হবে। শহরের মধ্যে দিনের বেলায় কোনও ট্রাক চলবে না।’’

Advertisement

মহকুমা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রাক ওভারলোডিংয়ের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। ইছামতী সেতুর স্বাস্থ্য ভাল নেই। সদ্য মেরামত হওয়া সেতুর উপরে কংক্রিট খসে শিক বেরিয়ে যাওয়ায় প্রমাদ গুণছেন শহরবাসী। সংশ্লিষ্ট দফতরের দাবি, অবিলম্বে অতিরিক্ত মাল নিয়ে সেতুর উপর দিয়ে ট্রাক চলাচল বন্ধ হোক। না হলে বিপদ হতে পারে।

অতিরিক্ত পাথর নেওয়ায় বৃহস্পতিবার পায়েল মোড় এবং এ দিন সকালে রবীন্দ্রভবন ও রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে ট্রাকের চাকা ভেঙে পড়ে রাস্তা আটকে পড়ে। ইটিন্ডা এবং মার্টিনবার্ন রোড বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়। আমতলা এলাকার মানুষ পথে বিক্ষোভ দেখান।

শহরে যানজট এড়াতে আগে ঠিক হয়েছিল, বসিরহাট হয়ে ঘোজাডাঙায় সীমান্ত বাণিজ্যের জন্য যাওয়া ট্রাক ত্রিমোহণী, চৌমাথা এবং আমতলা দিয়ে ঘুরে মার্টিনবার্ন রোড হয়ে পুরসভার সামনে দিয়ে ইছামতী সেতু পেরিয়ে ওল্ড সাথক্ষিরা রাস্তা ধরে ঘোজাডাঙায় যাবে। পুলিশের দাবি, তা সত্ত্বেও আমতলার পরিবর্তে বসিরহাট স্টেশনের সামনে দিয়ে শহরের মধ্যে এসএন মজুমদার রোড দিয়ে পম্য-বোঝাই ট্রাক চলাচল করায় এই বিপত্তি। স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, এবড়ো খেবড়ো মার্টিনবার্ন রাস্তায় ৩০-৪০ টনের ভারী গাড়ি আরও বেশি পণ্য নিয়ে যাতায়াত করছে। ১০-১২ চাকার সেই সব ট্রাকের জন্য রাস্তাও ভাঙছে। ধুলোয় অতিষ্ঠ শহরবাসী। মহকুমা পরিবহণ দফতরের অতিরিক্ত আধিকারিক রথীন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই ওভারলোডিং করে ট্রাক চলতে দেওয়া হবে না। বার বার বৈঠক সত্ত্বেও নির্দেশ না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরে ওভারলোডিং বন্ধের জন্য বলা হচ্ছে। রাস্তা এবং সেতু দু’টোরই ক্ষতি হচ্ছে ওভারলোডিংয়ের জন্য।’’

বসিরহাটের ঘোজাডাঙা ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়াডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কান্তি দত্ত বলেন, ‘‘দিনে সাড়ে তিনশো ট্রাক বাংলাদেশে যায়। ওভারলোডিংয়ের কারমে যন্ত্রাংশ ভেঙে ট্রাক মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ায় যানজট হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অসুবিধা হচ্ছে। আমরা চাই, সকলের সুবিধার জন্যই বন্ধ হোক ওভারলোডিং।’’ বসিরহাট মহকুমা ট্রাক মালিক সেবা সমিতির সম্পাদক খোকন গাজি বলেন, ‘‘যেখান থেকে ট্রাকে মাল তোলা হয়, সেখান থেকে বাড়তি মাল তোলা বন্ধ হলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। যানজট এড়াতে আমরা শহরের ভিতরের রাস্তা ব্যবহার করি না। তবে কেউ কেউ পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে শহরের মধ্যে দিয়ে চললে সে বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement