বেআইনি: অতিরিক্ত মালপত্র নিয়ে চলছে লরি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
রাত নামলেই গাইঘাটা ও বনগাঁ এলাকায় যশোর রোড বা ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কে দেখা যাবে, অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে প্রচুর ট্রাক ছুটছে। শুধু যশোর রোড নয়, বনগাঁ মহকুমা-সহ উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলিতে গেলেই চোখে পড়বে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহণের এই ছবি। ট্রাক, মিনি ট্রাক, ম্যাটাডর, ছোট মালবাহী গাড়ি— সকলেই কম বেশি ওভারলোডিং করে বলে অভিযোগ। তাতে সড়কের ক্ষতি তো হচ্ছেই। গাড়ি উল্টে বা গাড়ির যন্ত্রাংশ ভেঙে ঘটছে পথ দুর্ঘটনাও। বায়ুদূষণও এতে বাড়ে বলে মত পরিবেশবিদদের।
বনগাঁ মহকুমার যান চালকদের ওভারলোডিং বন্ধ করা ও পথ-আইন সম্পর্ক সচেতন করতে পরিবহণ দফতরের তরফে সম্প্রতি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। প্রায় এক হাজার যানচালক ও ট্রাক মালিক বনগাঁ শহরে ওই কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন। পরিবহণ কর্তা, ও পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকেরা যানচালকদের ওভারলোডিং না করার পরামর্শ দেন। ওভারলোডিং করে ধরা পড়লে আইন অনুসারে কী ধরনের শাস্তি ও জরিমানা হবে, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জেলা পরিবহণ দফতরের সরকারি সদস্য গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘কর্মশালা হওয়ার পরে পরিবহণ দফতরের তরফে ওভারলোডিং গাড়ি ধরপাকড় চলছে। কর্মশালার পরে গত কয়েক দিনে বনগাঁ মহকুমায় ২০টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা।’’
পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গাড়িতে থাকা মোট অতিরিক্ত মালপত্রের প্রথম এক টনের জন্য ২ হাজার টাকা এবং পরবর্তী প্রতি টনের জন্য ১ হাজার টাকা করে জরিমানা ধার্য করা হচ্ছে। আটক করা গাড়ি থেকে অতিরিক্ত মালপত্র নামিয়ে দেওয়াও হচ্ছে। সাধারণত, ১০ চাকা ট্রাকে ২৫ টন মালপত্র নেওয়া যায়। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ৪৫-৫০ টন মালও তোলা হচ্ছে।
জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা সিদ্ধার্থ রায় বলেন, ‘‘ট্রাকের ব্লু-বুকে লেখা থাকে, সেই ট্রাক কত মাল বহন করতে সক্ষম। ব্লু-বুক দেখেই আমরা জরিমানা করছি।’’ সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা, দিনের বেলায় মাঝে-মধ্যে ধরপাকড় হলেও রাতে তা তেমন চোখে পড়ে না।
পুলিশকে এ ক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপ করতে দেখা যায় না কেন?
ওভারলোডিংয়ের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান খুব বেশি না হলেও পুলিশের তরফে চালক ও ট্রাক মালিকদের সচেতন করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায়। পরিবহণ দফতরের বনগাঁ মহকুমার সহকারী আধিকারিক বিপ্লব প্রধান বলেন, ‘‘ওভারলোডিংয়ের বিষয়ে পরিবহণ দফতরের অফিসারেরাই একমাত্র কেস নিতে পারেন। আমরা নিয়মিত ধরপাকড় চালাচ্ছি। এখন ওভারলোডিং অনেকটাই কমানো গিয়েছে।’’ওভারলোডিং অনেক কমে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক দিলীপ দাস। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি নির্দেশে ট্রাকে মালপত্র বহন করার ক্ষমতা আগের থেকে আরও ৫ টন বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে ওভারলোডিং এখন অনেকটাই কমেছে।’’ ট্রাক মালিকদের বক্তব্য, তাঁরা ওভারলোডিং করেন না। কারণ, তাতে ট্রাকের ক্ষতি হয়। কিন্তু সমস্যা সেই সব ব্যবসায়ীদের নিয়েই হয়, যাঁরা ট্রাক ভাড়া করে মাল পরিবহণ করেন। তাঁরা মালিককে না জানিয়ে বেশি মাল তোলেন। চালক ও খালাসিদের একাংশ এই কাজে তাঁদের সাহায্য করেন বলে অভিযোগ।