TMC

গণেশ পুজোর উদ্যোগে সামিল তৃণমূল, কটাক্ষ বিরোধীদের

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাবড়া পুরসভা এলাকার ২৪টি ওয়ার্ডেই গণেশ পুজোর আয়োজন হয়েছে

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

হাবড়া শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২০ ০০:৫০
Share:

প্রতীকী ছবি।

কারও ভরসা রামে। কেউ ধরছেন গণেশের শ্রীচরণ— হাবড়ায় গণেশ পুজোর সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের যুক্ত থাকার বিষয়টিকে এ ভাবেই দেখছেন শহরবাসীর একাংশ।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাবড়া পুরসভা এলাকার ২৪টি ওয়ার্ডেই গণেশ পুজোর আয়োজন হয়েছে। পুজো হচ্ছে, ‘ওয়ার্ড অধিবাসী বৃন্দ’-র ব্যানারে। পুজোগুলির পৃষ্ঠপোষক হাবড়ার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পুর প্রশাসক নীলিমেশ দাস, হাবড়া শহর তৃণমূল সভাপতি সীতাংশু দাস। এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডের তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ডের দলীয় সভাপতিরাও পুজোর পৃষ্ঠপোষক।

কেন হঠাৎ গণেশ পুজোর আয়োজনের এই ঘটা?

Advertisement

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, লোকসভা ভোটে হাবড়া বিধানসভা এলাকা থেকে তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদার কয়েক হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিলেন। পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ডেই তৃণমূল প্রার্থী পিছিয়ে ছিলেন। বিধানসভা ভোটের আগে তাই তৃণমূল নেতৃত্ব ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে। জনসংযোগ বাড়াতে বিধায়ক এলাকায় ঘুরে ঘুরে করোনা নিয়ে মানুষকে সচেতন করছেন। মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার বিলি করছেন। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতী পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিধায়ক সংবর্ধনা দিয়েছেন। তবে সামাজিক কর্মসূচিই হোক কিংবা গণেশ পুজো— এ সবের সঙ্গে রাজনীতির যোগ দেখছেন না তৃণমূল নেতারা।

তবে তাতে থামছে বিরোধীদের কটাক্ষ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, এ হল রামের পাল্টা গণেশ উৎসব। রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন নিয়ে বিজেপি যেমন দেশ জুড়ে আবেগের ঢেউ তুলেছে, তেমনই বিধানসভা ভোটের আগে গণেশ পুজোকে সামনে রেখে তৃণমূলও নরম হিন্দুত্বের লাইনে হাঁটতে চাইছে। সিপিএমের বক্তব্য, তৃণমূল এবং বিজেপি দু’টি দলই সাম্প্রদায়িক। তারা আলাদা আলাদা দু’টি সম্প্রদায়ের পক্ষে মৌলবাদকে তোষণ করে। ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। তৃণমূল হয় তো দেখছে, কিছু ভোট কম পড়েছে। সে কারণেই তারা গণেশ পুজোর আমদানি করছে। সিপিএমের হাবড়া শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক আশুতোষ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধি, করোনা চিকিৎসায় অব্যবস্থা-সহ নানা ভাবে মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। রুজিরোজগার বন্ধ। এই সময়ে গণেশ পুজো মানুষ কিছুতেই মেনে নেবেন না। তাঁদের কাছে এগুলো তামাশা ছাড়া কিছু নয়।’’

বিজেপি নেতৃত্বের আবার বক্তব্য, গণেশ পুজো করে তৃণমূল মানুষের কাছে হাসির খোরাক হচ্ছে। বিজেপি নেতা বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘তৃণমূল ধর্মচূত্য হয়েছে। গণেশ পুজোর মাধ্যমে নিজেদের শোধন করে সমাজে উঠে আসতে চাইছে। মানুষ এ সব হাস্যকর বলে মনে করছেন। ব্যবসায়ীরা আনন্দ উপভোগ করছেন। এ সব করে তৃণমূলের কোনও রাজনৈতিক লাভ হবে না। মানুষ তৃণমূলকে হারানোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।’’

এ সব সমালোচনায় কান দিতে নারাজ তৃণমূল। নীলিমেশ বলেন, ‘‘কয়েক বছর ধরেই হাবড়া শহরে ১৪-১৫টি গণেশ পুজো হচ্ছে। সে সব পুজোর সঙ্গে আমরা যুক্ত থাকি। যে কোনও শুভ কাজের সূচনা হয় গণেশ পুজোর মাধ্যমে। এ বার গণেশ পুজোর মাধ্যমে করোনা নিয়ে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।’’ জ্যোতিপ্রিয়র বক্তব্য, ‘‘হিন্দুধর্মের ইজারা শুধু বিজেপি নেয়নি। আমরা সব পুজো করি। অন্য ধর্মকে শ্রদ্ধা করি।’’ প্রতিটি বাড়িতে পুজোর প্রসাদ ও শুভেচ্ছা কার্ড পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সিপিএম-বিজেপির কটাক্ষ নিয়ে নীলিমেশের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা যারা তৃণমূল করি, তারাই পাড়ায় পাড়ায় কালীপুজো, দুর্গাপুজো করি। সেখানে সিপিএম ও বিজেপিকে দেখা যায় না। বিজেপি ধর্মের কথা, রামের কথা বলে রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য। আমরা ধর্ম পালন করি শ্রদ্ধার সঙ্গে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement