গাইঘাটাতেও বাড়ছে জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ

ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রকাশ্যে রমরমিয়ে চলছে হাটে-বাজারে, দোকানে। ক্রেতা বিক্রেতা কারও মধ্যে কোনও সচেতনা নেই। নিকাশি নালার মধ্যে প্লাস্টিক থার্মোকল আবর্জনা ভর্তি। বাড়ির লোকজন আবর্জনা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ নিজেরাই নালার মধ্যে ফেলছেন। নিকাশি নালা দিয়ে জল বের হচ্ছে না। বৃষ্টির জল জমে আছে। অনেক বাড়ির মধ্যে টিউবওয়েলের কাছে গর্ত করা। তাতে জল জমে আছে। ডাবের খোলা, মাটির ভাঁড়, প্লাস্টিক বাড়ির আশেপাশে ছড়ানো রয়েছে।   

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৯ ০২:০৭
Share:

অভিযোগ, জ্বর-ডেঙ্গি ছড়ালেও পঞ্চায়েত বা প্রশাসনের তরফে জোরদার পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। প্রতীকী চিত্র।

জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছে গাইঘাটা ব্লকে।

Advertisement

রোজই বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। অভিযোগ, জ্বর-ডেঙ্গি ছড়ালেও পঞ্চায়েত বা প্রশাসনের তরফে জোরদার পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। মশা মারার তেল, ব্লিচিং ছড়ানো হলেও তা নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে না। ঝোপ-জঙ্গলে ভরে আছে। খানাখন্দে জল জমে আছে। ডোবায় বৃষ্টির জল জমে। তার মধ্যে ডেঙ্গি মশার লার্ভা ভেসে বেড়াচ্ছে। মানুষও সচেতন নন। সম্প্রতি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় নবম শ্রেণির পড়ুয়া অনীশা সরকারের। তাদের বাড়ির পিছনে ডোবা। বন জঙ্গলে ভরা।

ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায় এ বার ডেঙ্গির প্রকোপ সব থেকে বেশি ছড়িয়েছে। তারপরের স্থান গাইঘাটা ব্লক। সরকারি ভাবে বুধবার পর্যন্ত গাইঘাটা ব্লকে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৩০৮ জন। বেসরকারি ভাবে সংখ্যাটা আরও বেশি। ইতিমধ্যেই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। অনীশার আগে মারা গিয়েছিলেন ঘোজা এলাকার বাসিন্দা বিজলি সরকার (৫২)।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকে সর্বত্র জ্বর-ডেঙ্গি ছড়ালেও সব থেকে খারাপ পরিস্থিতি ধর্মপুর ১, ধর্মপুর ২, জলেশ্বর ২, সুটিয়া, রামনগর ও ডুমা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়।

ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রকাশ্যে রমরমিয়ে চলছে হাটে-বাজারে, দোকানে। ক্রেতা বিক্রেতা কারও মধ্যে কোনও সচেতনা নেই। নিকাশি নালার মধ্যে প্লাস্টিক থার্মোকল আবর্জনা ভর্তি। বাড়ির লোকজন আবর্জনা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ নিজেরাই নালার মধ্যে ফেলছেন। নিকাশি নালা দিয়ে জল বের হচ্ছে না। বৃষ্টির জল জমে আছে। অনেক বাড়ির মধ্যে টিউবওয়েলের কাছে গর্ত করা। তাতে জল জমে আছে। ডাবের খোলা, মাটির ভাঁড়, প্লাস্টিক বাড়ির আশেপাশে ছড়ানো রয়েছে।

বিএমওএইচ ভিক্টর সাহা বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই ৯টি শিবির করে জ্বর-ডেঙ্গিতে আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হয়েছে। চাঁদপাড়া ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালেই ডেঙ্গি নির্ণয়ের পরীক্ষা করা হচ্ছে।’’

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শিবির করে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি তাঁদের সচেতন করা হচ্ছে। শিবিরে আসা রোগীদের রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে ডেঙ্গি পরীক্ষার জন্য। ভিক্টর বলেন, ‘‘শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহের ফলে আগে ভাগে ডেঙ্গি শনাক্ত করা যাচ্ছে বা আগেই চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হচ্ছে।’’

তবে বহু মানুষ এখনও জ্বর হলে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে প্রথমেই আসছেন না। তাঁরা হাতুড়ে বা ঝাড়ফুঁকের উপর নির্ভর করছেন। রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছেন না। শেষ মুহূর্তে রোগীর অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিক্টর বলেন, ‘‘মানুষকে একাধিকবার বোঝানার পর একাংশ মানুষ সচেতন হচ্ছেন না, এটা দুর্ভাগ্যের বিষয়।’’

বাসিন্দারা জানালেন, ডেঙ্গি প্রতিরোধে আগেভাগে পদক্ষেপ করা হলে প্রকোপ ছড়াত না। এখন নড়চড়ে বসেও আর ডেঙ্গি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না।

গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোবিন্দ দাস বলেন, ‘‘মশা মারার তেল, চুন-ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতেও প্রচার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বন্ধ করতে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement