পিছনে টাঙানো ডেঙ্গি নিয়ে সরকারি সচেতনতার বার্তা। সামনে জমে রয়েছে জল-কাদা। যশোর রোডের গায়ে হাবড়া থানায় প্রবেশ পথের সামনে এই অবস্থা বেশ কিছুদিন ধরে। —সুজিত দুয়ারি
করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যার নিরিখে শীর্ষে ছিল উত্তর ২৪ পরগনা। জেলায় ডেঙ্গির প্রভাবও বরাবর বেশি। প্রশাসন সূত্রের খবর, এ বার এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২০০। তবে অন্যান্য বারের তুলনায় এ বার আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বলেই দাবি স্বাস্থ্য আধিকারিকদের।
শুক্রবার মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন। জেলাশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মশাবাহিত ওই রোগের মোকাবিলায় আগামী সাত দিনের মধ্যে জমা জল, জমে থাকা আবর্জনা সাফ করতে হবে।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, মুখ্যসচিবের নির্দেশের আগে থেকেই এ বার জেলায় ডেঙ্গি রুখতে পদক্ষেপ করা হয়েছে। জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, “ডেঙ্গি রুখতে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে অ্যানটমোলজিক্যাল সার্ভে করা হচ্ছে নিয়মিত। সেই মতো পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ব্লক এলাকায় আগেই বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার কাজ হচ্ছিল। জুলাই মাস থেকে পুরসভা এলাকাতেও ওই কাজ শুরু হয়েছে। ভেক্টর কন্ট্রোল টিম কাজ করছে। ব্লক ও পুরসভায় বায়ো লার্ভিসাইড এবং গাপ্পি মাছ সরবরাহ করা হয়েছে।”
কয়েক বছর আগে ডেঙ্গি রুখতে দেগঙ্গায় ব্লিচিং পাউডারের বদলে আটার গুঁড়ো ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। এ বার এই সব ঘটনা সম্পর্কে সচেতন আছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রতি সপ্তাহে একদিন করে জেলাশাসক ব্লক ও পুরসভার প্রতিনিধিদের নিয়ে রিভিউ মিটিং করছেন। জেলায় কোথায় কোথায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা জমা জল সরানো, মশার লাভা শণাক্তকরণ ও তা নষ্ট করার কাজ করছেন। নিকাশি নালা পরিষ্কারে জোর দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ডেঙ্গি মশার লার্ভা মারতে জেলায় বায়ো লার্ভিসাইডের ব্যবহার শুরু হয়েছে। বায়ো লার্ভিসাইড এক ধরনের রাসায়নিক, যার ব্যবহারে মশার লার্ভা মারা যায়। জলের ক্ষতি হয় না।
২০১৭ সালে জেলায় ডেঙ্গি ভয়াবহ আকার নিয়েছিল। বিশেষ করে দেগঙ্গা, হাবড়া এবং অশোকনগরে ডেঙ্গির প্রকোপ ছিল বেশি। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০২০ সালে জেলায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৮৩৩ জন। ২০১৯ সালে সংখ্যাটা ছিল ২০,১৯৯ জন। এ বার অবশ্য তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশ কম। গত বছরের তুলনায় ডেঙ্গি পরীক্ষার সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।
সরকারি ভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও বনগাঁ, হাবড়া, অশোকনগর, বারাসত, বসিরহাট, ব্যারাকপুরে কোথাও গোপনে কোথাও প্রকাশ্যে প্লাস্টিকের ব্যবহার চলছে। ফলে নিকাশি সমস্যা থাকছে। অভিযোগ, মুখে নালা সাফাইয়ের কথা বলা হলেও বিভিন্ন পুর এলাকায় নিকাশি নালা পরিস্কার হয়নি। নালার মধ্যে নোংরা আবর্জনা ভর্তি। নালাগুলি মশার আতুরঘরে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ, মশা মারার কাজেও গতি আসেনি। যদিও প্রশাসনের দাবি, স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশা মারার তেল স্প্রে করছেন। ঝোপজঙ্গল, নিকাশি নালা সাফাই করা হচ্ছে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ বার পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় জমা জলের সমস্যা সে ভাবে তৈরি হয়নি। তবে প্রশাসনের সতর্ক থাকা জরুরি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা স্বাস্থ্য জেলায় গত বুধবার পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১৮৩ জন। এর মধ্যে ভাঙড় ১, ২, ক্যানিং ১, ২, বাসন্তী, গোসাবা, রাজপুর সোনারপুর পুরএলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি বলে স্বাস্থ্য জেলা সূত্রে জানানো হয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের তরফে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্লক প্রশাসন, স্বাস্থ্য দফতর, ভিআরপি, ভিসিটি, ভিএসটি কর্মীরা এলাকায় ঘুরে মানুষকে সচেতন করছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে জ্বরের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাজার, সরকারি অফিস, হাসপাতাল এলাকায় যাতে কোনও ময়লা আবর্জনা জমা না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি, এমন এলাকাগুলি চিহ্নিত করে সেখানে জমা জল, নিকাশি নালা সাফ করা হচ্ছে। ডেঙ্গি মশার লার্ভা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক মুক্তিসাধন মাইতি বলেন, “মানুষ সচেতন হলে দ্রুত ডেঙ্গি রোধ করা সম্ভব। এই সময়ে সব থেকে বেশি জরুরি, মশারি টাঙিয়ে ঘুমোনো। জ্বর, গায়ে ব্যাথা-সহ ডেঙ্গির উপসর্গ থাকলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে হবে।”