লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে আবেদনের জন্য মহিলাদের ভিড়। ক্যানিং ২ ব্লকের হাওড়ামারি হাইস্কুলে দুয়ারে সরকার শিবিরে। ছবি: সামসুল হুদা।
‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির প্রথম দিনেই উপচে পড়ল মানুষের ভিড়। সোমবার সকাল থেকে উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় শিবিরগুলিতে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। অনেকেরই মাস্ক ছিল না। শারীরিক দূরত্ববিধি বজায় থাকতে দেখা যায়নি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, এ দিন মোট ৭৪টি শিবির হয়েছে জেলা জুড়ে। এই শিবিরগুলির মাধ্যমে ১৮টি প্রকল্পের সুবিধা পেতে আবেদন করা যাচ্ছে। তার মধ্যে প্রথম দিন সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে।
এ দিন মিনাখাঁর আটপুকুর অঞ্চলে একটি শিবিরে গিয়ে দেখা যায়, মহিলারা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। অধিকাংশের মাস্ক ছিল না। কোলে বাচ্চা নিয়ে মহিলাদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা মহিলারাও ছিলেন লাইনে। জেলার শিবিরগুলোয় কেবল মাত্র লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের আবেদন জমা নেওয়া জন্য আলাদা করে কয়েকটি কাউন্টার খোলা হয়েছিল। তাতেও ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে প্রশাসনিক কর্তাদের। বসিরহাটের বাসিন্দা গৌরী দাস ন’মাসের বাচ্চা নিয়ে শিবিরে এসেছিলেন। তিনি বলেন, “ভোরবেলায় উঠে সংসারের কাজ সেরে শিবিরে এসেছি। দুপুর ১২টার সময় ফর্ম জমা দিতে পেরছি।” মিনাখাঁর বিডিও শেখ কামরুল ইসলাম বলেন, “বারবার মাইকে প্রচার করা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য। কিন্তু মহিলারা যদি না মানেন, আমরা কি করব বলুন? কাউন্টারের ভিতরে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।”
সন্দেশখালি ১ ব্লকের ন্যাজাট ২ পঞ্চায়েতের দক্ষিণ আখড়াতলা রবীন্দ্র শিক্ষানিকেতনে গিয়েও দেখা যায়, স্কুলের মাঠে কয়েক হাজার মহিলা ভিড় করেছেন। শারীরিক দূরত্ব বিধি বজায় ছিল না। বিডিও সুপ্রতিম আচার্য বলেন, “আমরা জানতাম বেশি মানুষ আসবেন। তাই আগেই পুলিশ ও ব্লক প্রশাসন প্রস্তুত ছিল। মাস্ক পরতে সবাইকে বাধ্য করা হয়। স্যানিটাইজার দেওয়ার ব্যাবস্থা ছিল।”
বনগাঁ, হাবড়া, অশোকনগর, বারাসতের শিবিরগুলিতেও ভিড় ছিল। শারীরিক দূরত্ব বিধি বজায় ছিল না। অনেকেরই মাস্ক ছিল না। অনেকর মাস্ক থুতনিতে নেমে এসেছিল। বনগাঁ শহরে শিবিরে আসা মানুষদের জন্য মাথায় ছাউনির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে আবেদন করতে আসা অশোকনগরের এক মহিলা বলেন, “অনটনের সংসারে কিছুটা হলেও সাহায্য হবে এই অর্থ পেলে। তাই সকাল থেকেই চলে এসেছি।” ভিড় এড়াতে হাবড়ার শিবিরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
দত্তপুকুর থানা এলাকার কম্বমগাছি এলাকায় দুয়ারে সরকার কর্মসূচির শিবির খোলা হয়েছিল। সেখানেও প্রচুর ভিড় হয়। কিছু উপভোক্তার দাবি, তাঁরা আবেদন পত্রের ফর্ম পূরণ করতে পারেননি। অবশেষে ১০-২০ টাকা করে দিয়ে বাইরে থেকে ফর্ম পূরণ করেছেন তাঁরা। যদিও বিষয়টি জানাজানি হতেই তা বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ
জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, “শিবিরে স্বাস্থ্যবিধি যাতে বজায় থাকে, সেজন্য মাইকে প্রচার করা হচ্ছে। কোথাও মাস্ক বিলি করা হচ্ছে। শিবিরে প্রচুর মানুষ আসবেন, তা জানাই ছিল। সেই মতো প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”