শুনশান: পর্যটকের দেখা নেই এলাকায়। নিজস্ব চিত্র।
দুর্গা প্রতিমার বিসর্জন দেখতে প্রত্যেক বছর রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে টাকিতে আসেন অনেকে। শারদোৎসবে টাকির হোটেল ব্যবসায়ীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। গত বছর করোনার প্রকোপ থাকা সত্ত্বেও এসেছিলেন অনেকে। তবে এ বছর হোটেল ব্যবসায় ভাটার টান বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
অতিমারির আগের বছরগুলিতে দুর্গাপুজোর ৩-৪ মাস আগে থেকে টাকির সব হোটেলের সব ঘর বুকিং হয়ে যেত। এ বছর মহালয়ার এক সপ্তাহও বাকি নেই, অথচ এখনও হোটেলগুলির ঘরের গড়ে ২০-২৫ শতাংশ বেশি বুকিং হয়নি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হোটেল ব্যবসায়ীরা।
টাকি ট্যুরিস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রের খবর, টাকিতে প্রায় ১৯টি গেস্টহাউস আছে। প্রায় আড়াইশো ঘর সব মিলিয়ে। প্রতি বছর দুর্গাপুজোর অনেক আগে থেকে পুজোর ৫ দিন টাকিতে কাটাতে পর্যটকদের জন্য ‘প্যাকেজ’ চালু থাকত। প্যাকেজের এতটাই চাহিদা থাকত, প্রত্যেক বছর পুজোর কয়েক মাস আগে থেকে বুকিং না করলে শেষ মুহূর্তে আর সুযোগ পেতেন না পর্যটকেরা। গত বছর দুর্গাপুজোর সময়ে প্রায় সব হোটেলের ৮০ শতাংশ ঘর প্যাকেজ পদ্ধতিতেই বুকিং হয়ে গিয়েছিল। যে ২০ শতাংশ ঘর বুকিং হয়নি, সেগুলিও পুজোর কাছাকাছি সময়ে এসে বুকিং হয়ে যায়।
এ বছর চিত্রটা আলাদা। এখনও পর্যন্ত যত বুকিং এসেছে, তার মধ্যে টানা ৫ দিনের প্যাকেজ নিতে চাইছেন না প্রায় কেউই।
পাঁচ দিনের বুকিং না নিয়ে হোটেলর ঘরের বুকিং নিলে হোটেল ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি হবে, এমনটাই মনে করছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। একদিনের জন্য বুকিং এখনও নিচ্ছে না হোটেলগুলি। টাকি ট্যুরিস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রদ্যোৎ দাস বলেন, “আমরা গত বেশ কয়েক মাস ব্যবসা করতেই পারিনি। দুর্গাপুজোয় আয় করার একটা বড় সুযোগ থাকে। সে জন্য সারা বছর আমরা অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু এ বারের অবস্থা দেখে খুবই চিন্তায় আছি।”
প্রদ্যোৎ বলেন, ‘‘এ বছর ব্যবসার অবস্থা গত বছরের তুলনায় আরও খারাপ। এ ভাবে চলতে থাকলে কী করে হোটেল ব্যবসা টিকবে জানি না।’’
হোটেলের ব্যবসায় মন্দা চলায় কর্মী ছাঁটাই হয়েছে অনেক হোটেলে। তার পরেও বেতন ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সামলানো মুশকিল হচ্ছে বলে জানালেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি সাহায্য প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা।
হোটেল ব্যবসায়ীরা আরও জানান, আমপান ও ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টাকি রাজবাড়িঘাটের পাশের ফুলের বাগান, টাকি শ্মশানঘাট চত্বরের রাস্তা, রাজবাড়িঘাট থেকে মিনি সুন্দরবন যাওয়ার রাস্তা। পর্যটকদের সুবিধার জন্য এই সমস্ত জায়গার সংস্কার প্রয়োজন।
পুরপ্রশাসক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টি একটু থামলেই নদীর পাশের যে সব রাস্তার কিছু অংশ খারাপ আছে, তা প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে সংস্কার করা হবে।” সোমনাথ আরও বলেন, “কয়েকদিন আগেই একটি বৈঠক হয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে। সেখানে ঠিক হয়েছে, কিছুক্ষণের জন্য হলেও ইছামতী নদীবক্ষে নেমে বিসর্জন উপভোগ করতে পারবেন মানুষ। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পরে।”
হোটেল ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, যদি মানুষ আগের মতো ইছামতীতে নৌকো নিয়ে নেমে বিসর্জন দেখতে পারেন, তা হলে পর্যটকেরা উৎসাহিত হবেন। পুরসভা সূত্রের খবর, টাকি জুড়ে প্রায় ৯০ শতাংশ টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি এলাকায় অনেকটাই ভাল বলে জানাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।