পুরনো এক্সরে মেশিন। এটি দিয়েই কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র
এক্স রে বিভাগের ঘরে প্রয়োজন সিসার দেওয়াল। কারণ, সেটি না থাকলে তেজস্ক্রিয় রশ্মি বের হতে পারে। কিন্তু ক্ষতিকর এই তেজস্ক্রিয় রশ্মিকে আটকানোর হাতিয়ার-দেওয়ালটি তৈরি করছে না এ কাজের বরাত পাওয়া ঠিকাদার সংস্থা। তাই কাকদ্বীপ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে কয়েক মাস ধরে চালুও করা যাচ্ছে না ডিজিটাল এক্স রে ইউনিট। পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকার আধুনিক মেশিন। কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন, দ্রুত তা চালু হবে।
ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায় বলেন, ‘‘কিছু কারিগরি সমস্যার জন্য ডিজিটাল এক্স রে চালু করা যাচ্ছে না। চেষ্টা করছি তা দ্রুত মিটিয়ে ফেলার।’’ মহকুমা হাসপাতাল থেকে কাকদ্বীপ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পরিণত হওয়ার পর থেকেই পরিকাঠামো নিয়ে নানা অসুবিধায় বার বার ভুগতে হয়েছে এর কর্তৃপক্ষকে। এ বারের সমস্যাটা একটু অন্য রকম। নতুন কেনা আধুনিক মানের এক্স রে মেশিন পড়ে রয়েছে কিন্তু পরিষেবা চালু করা যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য দফতরের সূত্রের খবর, রাজ্যের ৬টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ঠিকাদারির দায়িত্ব পেয়েছিল রাজ্যের অধীনস্থ একটি সংস্থা। কয়েক মাস আগে স্বাস্থ্য ভবন ডিজিটাল এক্স রে মেশিন পাঠায় কাকদ্বীপে। কিন্তু প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা দামের মেশিনটি স্রেফ পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে সিসার তৈরি দেওয়াল না থাকায়। ডিজিটাল এক্স রে’র তেজস্ক্রিয় রশ্মির বিকিরণ খুবই ক্ষতিকর।
কেন তৈরি করা যাচ্ছে না দেওয়াল?
স্বাস্থ্য জেলার কর্তাদের দাবি, দেওয়াল এত দিনে হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু টাকা নিয়েও কাজ করছে না ঠিকাদার সংস্থা। সিসার দেওয়াল হচ্ছে না বলে চালুও করা যাচ্ছে না এক্স রে ইউনিট।
হাসপাতালের উন্নয়ন কাজের বরাত পাওয়া সংস্থাটি কেন করে উঠতে পারছে না সিসার দেওয়ালের কাজ? সেই ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের তরফে জানানো হল, অন্যান্য কাজ তারা করছে বটে কিন্তু সিসা দেওয়াল তৈরি করে দেওয়ার বরাত এখনও তাদের দেওয়া হয়নি। ফলে কাজটি হয়নি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে দীর্ঘ দিন ধরেই সাবেক অ্যানালগ এক্স রে মেশিন দিয়েই যাবতীয় কাজ চলে। দিনে প্রায় ৬০-৭০ জন রোগী এই পরিষেবা পান। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় সেগুলির ফিল্ম পাওয়া নিয়ে। শরীরের বিভিন্ন অংশের ভাঙা বা ফাটার জন্য নানা আকারের ফিল্ম কিনে চালাতে হয়। অনেক সময়ে ফিল্ম স্বাস্থ্য ভবন থেকেও মেলে না। তা ছাড়াও, জটিল এক্স রে’র ক্ষেত্রে দু’টি বা তিনটি ফিল্ম জোড়া দিয়ে ছবি তুলতে হয়। এ রকম নানা অসুবিধার কথা মাথায় রেখেই কাকদ্বীপে ডিজিটাল এক্স রে মেশিন আনা হয়েছিল। কারণ, সেই মেশিনে যে কোনও এক্স রে নিখুঁত এবং সহজে করা যায়।
কিছু দিন আগেই রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব অনিল ভার্মা কাকদ্বীপ হাসপাতাল ঘুরে গিয়েছেন। তিনি পুরনো কাজ ফেলে রাখতে বারণও করে গিয়েছিলেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদার সংস্থাকে দিয়ে কাজ করাতে পারছেন না বলে তার জেরে এক্স রে’র আধুনিক পরিষেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।