সুন্দরবনের নামখানার মৌসুনি দ্বীপ।- নিজস্ব চিত্র।
চারদিকে অনন্ত জলরাশি। মাঝে সবুজ বনানী ঘেরা ছোট্ট একটি দ্বীপ। গ্রামীণ আবহে সমুদ্রের পাড়ে বসে দিব্যি কাটিয়ে দেওয়া যায় কয়েকটা দিন। তাই নিস্তব্ধ প্রকৃতির মাঝে ছুটি কাটাতে পর্যটকরা চলে আসেন এই দ্বীপে। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে গত কয়েক বছরে পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দক্ষিণ সুন্দরবনের নামখানার মৌসুনি দ্বীপ।
দীঘা, মন্দারমনি, বকখালির পাশাপাশি সমুদ্রের পাশে নির্জনে থাকার অন্যতম সুন্দর জায়গা এটি। অথচ দ্বীপে এখনও পর্যন্ত কোন কংক্রিটের যাত্রী আবাস তৈরি হয়নি। মৌসুনি দ্বীপকে তাই রাজ্যের মানুষের কাছে আরও আকর্ষণীয় করতে স্থানীয় বালিয়াড়াতে পর্যটন কেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নামখানা ব্লক প্রশাসন।
সমুদ্রের পাড়ে বেশ কয়েকটি মাটির কটেজ তৈরি করারও পরিকল্পনা রয়েছে। এলাকার প্রচলিত খাবার এবং সামুদ্রিক মাছের নানা পদ অভিনব ভাবে উপস্থাপন করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি নৌকায় চেপে পার্শ্ববর্তী দ্বীপগুলিও ঘুরে দেখানোর ব্যবস্থা করা হবে। তাঁবু ও কটেজ ঘেরা পর্যটন কেন্দ্রে সন্ধ্যা থেকেই থাকবে লোকগান-সহ একাধিক অনুষ্ঠান। সরকারি কটেজগুলিতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও প্রশাসন সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন: হায়দরাবাদের নাম বদলে ভাগ্যনগর রাখার দাবি তুললেন যোগী
এ বিষয়ে নামখানার বিডিও শান্তনু সিংহ ঠাকুর বলেন, ‘‘জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে কংক্রিটের হোটেল ভর্তি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মৌসুনি দ্বীপের গ্রামীণ পরিবেশকেই থিম করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা ভাবা হয়েছে। এই দ্বীপে পর্যটনের পাশাপাশি এলাকার শিল্প-সংস্কৃতি এবং গানকে একই ছাতার তলায় নিয়ে আসা হবে।’’
দীর্ঘ লকডাউনের পর ট্রেন চালু হওয়ায় এখন ধীরে ধীরে পর্যটকরাও আসতে শুরু করেছেন এই দ্বীপে। গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ‘হোম স্টে’। মূলত এই হোমস্টেগুলিকে কেন্দ্র করেই দ্বীপের পর্যটনের প্রসার ঘটেছে। পর্যটক এলেই তাঁদের ডাবের জল দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। দুপুরে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের সঙ্গে মনভোলানো খাবার। সন্ধেয় চা-বিস্কুটের সঙ্গে বাঙালি জলখাবার। এমনকী ক্যাম্প ফায়ারেরও বন্দোবস্ত রাখা হয়েছে। নিস্তব্ধ ঝাউবনে বসে সমুদ্র দেখে আনায়াসে কয়েকদিন কেটে যাবে ভ্রমণ পিপাসুদের। চাইলেই ছোট নৌকা নিয়ে ভেসেও পড়তে পারেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মেঘনাদ পোদ্দারের কথায়, ‘‘লকডাউন ও আমপানের জেরে হোমস্টেগুলি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ট্রেন চালুর পর ফের নতুন করে দ্বীপ সাজিয়ে তোলা হয়েছে। করোনার কথা মাথায় রেখে কড়া স্বাস্থ্য বিধিও মেনে চলছি। এ বারের শীতে অনেক পর্যটক আসবেন বলে আমরা আশাবাদী।’’