অশোকনগর মিউনিসিপ্যাল জেনারেল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের জায়গা। ছবি: সুজিত দুয়ারি
কোভিড পরিস্থিতিতে এলাকার মানুষের কাছে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দিতে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল চালু করল। শনিবার বিকেলে সেটির উদ্বোধন করা হয়েছে।
নাম দেওয়া হয়েছে, ‘মিউনিসিপ্যাল জেনারেল হাসপাতাল।’
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় পুরসভা পরিচালিত প্রজ্ঞানানন্দ সরস্বতী সেবাসদন বা মাতৃসদন নামে একটি হাসপাতাল ছিল। সেটি বাম আমলে তৈরি হয়েছিল। অতীতে সেখানে রোগী ভর্তি, অস্ত্রোপচার-সহ যাবতীয় চিকিৎসার সুযোগ মিলত। ছিল আধুনিক অপারেশন থিয়েটার। নামী চিকিৎসকেরা এখানে রোগী দেখতেন। খুবই কম টাকায় মিলত উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা।
দীর্ঘ দিন সেটি কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ে ছিল। সেই মাতৃসদনকেই এ বার মিউনিসিপ্যাল জেনারেল হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হল পুরসভার পক্ষ থেকে। শনিবারই এলাকায় একটি আরবান প্রাইমারি হেলথ্ সেন্টারেরও উদ্বোধন করা হয়েছে। সেখানে সপ্তাহে ৫ দিন মানুষ বহির্বিভাগে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন।
মিউনিসিপ্যাল জেনারেল হাসপাতাল চালু হওয়ায় এলাকার মানুষ স্বস্তি বোধ করছেন। ২ সেপ্টেম্বর থেকে অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালটি কোভিড হাসপাতালে হিসাবে চালু হয়েছে। তারপর থেকে ওই হাসপাতালে সাধারণ রোগের রোগীদের ভর্তি বন্ধ। বহির্বিভাগও বন্ধ। ওষুধপত্র দেওয়া হচ্ছে না। সব মিলিয়ে ওই হাসপাতাল থেকে করোনা ছাড়া অন্য কোনও চিকিৎসা পরিষেবা মিলছে না। এর ফলে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা এলাকার প্রায় দেড় লক্ষ মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা পেতে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের উপরে নির্ভর করতে হচ্ছে। রাতে কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত গাড়ি জোগাড় করে রোগীকে হাবড়া হাসপাতালে নিয়ে যেতে সমস্যায় পড়ছেন অনেকে। গাড়ি ভাড়াও পড়ছে অনেক। গরিব মানুষেরা অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
মিউনিসিপ্যাল জেনারেল হাসপাতাল চালু হওয়ায় শহরবাসীর সেই সমস্যা আর থাকল না। পুরপ্রশাসক প্রবোধ সরকার বলেন, ‘‘এখানে কোভিড হাসপাতাল চালু হওয়ায় অন্য রোগীদের পরিষেবা পেতে অসুবিধা হচ্ছিল। সেই সব মানুষের কথা ভেবে মিউনিসিপ্যাল জেনারেল হাসপাতাল চালু করা হল। রবিবার থেকে রোগী ভর্তি শুরু হবে।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালে আপাতত ৩২টি শয্যা থাকছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক-সহ মোট ১০ জন চিকিৎসক থাকছেন। খুবই কম টাকায় মানুষ এখান থেকে পরিষেবা পাবেন। ওষুধপত্র অবশ্য রোগীকে বাইরে থেকে কিনতে হবে। অপারেশন থিয়েটার নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে ওই কাজে। শীঘ্রই অপারেশন থিয়েটার চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন পুরপ্রশাসক।
এ প্রসঙ্গে বিজেপির অশোকনগর বিধানসভা কেন্দ্রের আহ্বায়ক স্বপনকুমার দে বলেন, ‘‘মিউনিসিপ্যাল হাসপাতাল থেকে মানুষ পরিষেবা পেলে তাকে সাধুবাদ। কিন্তু আমরা জানতে চাই, মাতৃসদনে যাবতীয় চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি, উন্নতমানের অপারেশন থিয়েটার ছিল। সেগুলো নতুন করে কেন কিনতে হল। তা হলে কি সে সব নষ্ট করা হয়েছিল। সেই দায় পুরসভাকে নিতে হবে।’’
অশোকনগরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সত্যসেবী কর বলেন, ‘‘আমরা দাবি করেছিলাম, কোভিড হাসপাতালে চালুর আগে বিকল্প চিকিৎসার ব্যবস্থা করার। কিন্তু তা করা হয়নি। হাসপাতাল চালু হলে কী ধরনের পরিষেবা মিলবে, সে দিকে আমরা নজর রাখছি। আমরা বলেছিলাম, হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে পরিষেবা দেওয়ার। সেটা করা হয়নি। এই হাসপাতালের প্রয়োজন এখন নেই। বাম ছাত্রযুবরা অশোকনগরে ইতিমধ্যেই আউটডোর পরিষেবা বিনামূল্যে চালু করেছেন।’’