আবর্জনা: নালায় পড়ে রয়েছে প্লাস্টিক। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
রাস্তার ধারে ডাঁই হওয়া আবর্জনা থেকে উড়ছে প্লাস্টিক। নিকাশি নালার মুখ বন্ধ হওয়ার জোগাড় প্লাস্টিক জমে জমে। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় চোখ ফেরালেই দেখা যাবে এই পরিস্থিতি।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ১১টি পুরসভাই এখন শাসক দলের দখলে। প্রতি বছর প্রতিটি পুরসভা কয়েক কোটি টাকা খরচ করে শুধু প্লাস্টিকের বর্জ্য সাফাই করতে। কিন্তু তাতে সমস্যা মেটে না। পুরসভাগুলির কাছে কম্প্যাক্টর মেশিন থাকলেও তার সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে অনেকে সড়গড় নয়। প্লাস্টিকের বর্জ্য ও অন্য শুকনো জঞ্জাল আলাদা করার মতো যথেষ্ট সাফাই কর্মীও নেই বহু পুরসভায়। তাই সহজ উপায় হল, রাস্তার ধারে বা নিকাশি নালায় বর্জ্য ফেলে পুড়িয়ে দেওয়া। তাতে আবার দূষণ ছড়ায়।
গত পুর নির্বাচনের পরে নতুন বোর্ড গঠন করে পুরসভাগুলি প্রথমেই প্লাস্টিক বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘নির্মল গঙ্গা’ মিশনে গঙ্গার পাড় সৌন্দর্যায়নের ক্ষেত্রে নজর দিতে বলেন। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল ও নদীর উল্টো পাড়ে হাওড়া-হুগলি শিল্পাঞ্চলে গঙ্গার ধার বরাবর প্লাস্টিক দূষণ রুখতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ পুরসভাগুলিকে সতর্ক করেছিল। কড়া নজরদারিও ছিল। গঙ্গার পাড়ে প্লাস্টিক বা প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্যর পাহাড় আর না তৈরি হলেও পলিথিনের ব্যবহার কমেনি। গঙ্গার পাড়ের বদলে শিল্পাঞ্চলের শহরগুলির আনাচে-কানাচে, নর্দমা, বড় নিকাশি নালা, পঞ্চায়েত ঘেঁষা বাইপাস ও এক্সপ্রেসওয়েগুলির ধারে এখন প্লাস্টিকের বর্জ্যর পাহাড় জমছে প্রতিদিন। সেগুলি নষ্ট করতে মাঝেমধ্যেই আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। মাঝেমধ্যেই সেই আগুন আবার রীতিমতো ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়েতে থমকে যাচ্ছে যানবাহন।
বিমানবন্দর থেকে দক্ষিণেশ্বর যাওয়ার বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের ৯ কিলোমিটার রাস্তায় কিংবা নিমতা থেকে কল্যাণী পর্যন্ত কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের দু’ধারে গত কয়েক বছর ধরে প্লাস্টিক ও অন্য বর্জ্য ফেলাটা পুরসভাগুলির নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি ব্যারাকপুরে উত্তর ২৪ পরগনার ২৬টি পুরসভার বর্জ্য সমস্যা নিয়ে বৈঠক হয় প্রশাসন ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের উদ্যোগে। সেখানে প্লাস্টিক সমস্যা নিয়ে বক্তব্য রাখেন অধিকাংশ পুরপ্রধান।
ব্যারাকপুরের পুরপ্রধান উত্তম দাস বলেন, ‘‘বারবার আর্জি জানিয়েও পুর নাগরিকদের প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে সচেতন করা যাচ্ছে না। বছরে প্রায় দু’কোটি টাকা খরচ হচ্ছে শুধু প্লাস্টিক দূষণ ঠেকাতে। নিকাশি নালাগুলিতে প্লাস্টিক আটকে অল্প বৃষ্টিতেই জলবন্দি হচ্ছে শহর।’’ একই দাবি হালিশহরের চেয়ারম্যান অংশুমান রায়ের। তিনি বলেন, ‘‘গোটা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের প্রতিটি শহরেই প্লাস্টিক সমস্যার মোকাবিলা করতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে। আমরা আগের থেকে কিছু মানুষকে বোঝাতে পারলেও যে ভাবে জনসংখ্যা বাড়ছে, আরও সচেতন হওয়া দরকার।’’
প্রতিটি পুরসভাকেই কম্প্যাক্টর মেশিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যাতে প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য ও অন্য বর্জ্য আলাদা করে মণ্ড করা হবে। সেই বিষয়ে সাফাই বিভাগের কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘রাস্তার ধারে বা নিকাশি নালায় কোনও রকম বর্জ্য ফেলে দূষণ ছড়ানো যাবে না। সে বিষয়ে পুরসভাকেই নজর রাখতে হবে। সচেতন হতে হবে সাধারণ মানুষকেও। নইলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’