হালিশহর পুরসভায় শিকেয় পুর-পরিষেবা   

বিজেপির থেকে নতুন করে তৃণমূল পুরসভার দখল নেওয়ায় জট কাটবে বলে আশা করেছিলেন শহরবাসী। কিন্তু আদালতের নির্দেশে তাও বিশবাঁও জলে চলে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৯ ০০:৪৭
Share:

হালিশহর পৌরভবন। —ফাইল চিত্র।

তৃণমূল থেকে রাতারাতি বিজেপি। বিজেপি থেকে আচমকাই ফের তৃণমূলে। হালিশহর পুরসভার বারবার ভোলবদলে বিরক্ত এলাকার বাসিন্দারা। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই ডামাডোলে গত তিন-চার মাস ধরে পুর-পরিষেবা শিকেয় উঠেছে। তার ফলে ভোগান্তি বেড়েছে নাগরিকদের।

Advertisement

বিজেপির থেকে নতুন করে তৃণমূল পুরসভার দখল নেওয়ায় জট কাটবে বলে আশা করেছিলেন শহরবাসী। কিন্তু আদালতের নির্দেশে তাও বিশবাঁও জলে চলে গিয়েছে। বর্যার আগেই পুর এলাকার নালা-নর্দমা পরিষ্কার হয়ে যায়। এ বার এখনও পর্যন্ত সেই কাজ ঠিকমতো শুরুই হয়নি। তার ফলে ভারী বৃষ্টিতে শহর ভাসবে বলে আশঙ্কা এলাকার বাসিন্দাদের। পুরসভায় বিভিন্ন কাজে আসা মানুষদের নিত্য হয়রান হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।

হালিশহর তৃণমূলের দখলে ছিল। লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে তৃণমূল কাউন্সিলদের দিল্লি নিয়ে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। তার মাসখানেক পরে সেই কাউন্সিলরেরা তৃণমূলে ফেরেন। এরই মধ্যে কিছু কাউন্সিলর পুরপ্রধানের অপসারণ নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন। কিন্তু বিজেপি কাউন্সিলর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ায়, আদালতের নির্দেশে তা স্থগিত হয়ে গিয়েছে। ফলে পুরসভায় ফের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

Advertisement

হালিশহরের তেঁতুলতলা এলাকার কোনও নর্দমা এ বার সাফ হয়নি। এলাকার বাসিন্দা সুবল ভদ্র সোমবার পুরসভায় এসেছিলেন সেই বিষয়ে কথা বলতে। কিন্তু বিফল হয়েই ফিরতে হয়েছে। কার সঙ্গে কথা বলবেন, কার কাছে যাবেন, তাই জেনে উঠতে পারেননি তিনি। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘পুরসভাতে যে কী চলছে, তাই বুঝে উঠতে পারছি না। কে কখন ক্ষমতায় আসছে, তারা যে কী করতে চাইছে, তাই বুঝতে পারছি না আমরা। এলাকার কোনও নর্দমা পরিষ্কার হয়নি। কেন হয়নি তার কোনও জবাব নেই।’’এলাকার ব্যবসায়ী বিকাশ হালদার বলেন, ‘‘পুর-পরিষেবা শিকেয় উঠেছে। রাস্তায় জঞ্জাল পড়ে থাকছে দিনের পর দিন। সাফ হচ্ছে না। দেখার কেউ নেই। ভোটের জন্য সেই কবে থেকে পুরসভা হোঁচট খেতে খেতে চলছে। জানি না এ রকম আর কতদিন চলবে!’’ শুধু বিকাশই নন, প্রায় সব এলাকারই বাসিন্দাদেরই অভিযোগ একই। রাস্তা-ঘাট, পথবাতি, জঞ্জাল সাফাই, সবই কার্যত অবহেলিত। সকলেরই অভিযোগ, একটা পুরসভা যে আছে, তাই ভুলতে বসেছেন তাঁরা।

এলাকার বাসিন্দা সুপর্ণা সরকার ব্যারাকপুরের একটি সরকারি অফিসে চাকরি করেন। তিনি বলেন, ‘‘রোজ খুব সকালে আমাকে বাড়ি থেকে বেরোতে হয়। গলি রাস্তা বলে কোনও যানবাহন বিশেষ চলে না। তার ফলে হেঁটে রেল স্টেশনে যেতে হয়। রাস্তা জুড়ে জঞ্জাল পড়ে থাকে। কার্যত সে সব মাড়িয়ে যেতে হয়। খুব খারাপ লাগে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘পুরসভা কেন এই সামান্য পরিষেবাটুকু দেবে না?’’

তবে পুরসভার কোনও কোনও দফতরে কাজ চলছে। রঘুনাথ দত্ত নামে এক ব্যক্তি পুরসভায় কাজে এসেছিলেন বুধবার। তিনি বলেন, ‘‘আমার কোনও অসুবিধা হয়নি। আমার যে দফতরে কাজ ছিল, তা ভালভাবেই হয়েছে। অন্য অনেকেই এসে নিজের কাজ সেরেই ফিরেছেন।’’

বীজপুরের বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় সম্প্রতি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি চেষ্টা করেছিলাম পুরসভাটাকে একটু সাজিয়ে চালাতে। কিন্তু কিছু অপরাধী এবং আর প্রশাসন পুরসভা ফের দখল করে নিল। পুরসভার সামান্য পরিষেবাও মিলছে না। রাস্তা, নর্দমা, নিকাশি— কোনও কাজই হচ্ছে না। এটা চলতে পারে না।’’

হালিশহরের পুরপ্রধান অংশুমান রায় অবশ্য কাউকে দোষারোপ করতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভায় যে অচলাবস্থা চলছিল, সেটা শহরবাসী জানেন। আমাদের হাতে সময় খুব অল্প। ফলে আমাদের কাজটা করে দেখাতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement