—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
পঞ্চায়েতে ৫০ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে এ রাজ্যে। পুরুষ জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মহিলারাও দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। বহু পঞ্চায়েতেই মহিলারা প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, জেলাপরিষদ সদস্যের পদে আছেন। তবে কিছু মহিলা জনপ্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাঁরা শুধু ভোটেই জেতেন। তারপর তাঁদের হয়ে কাজ করতে দেখা যায় স্বামী বা পরিবারের অন্য কোনও পুরুষ সদস্যকেই। গ্রামের মানুষের কাছে তাঁরাই জনপ্রতিনিধি হিসাবে পরিচিতি পান। পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিতেও যাতায়াত তাঁদের। যে কোনও প্রয়োজনে তাঁদের কাছেই দরবার করেন গ্রামবাসীরা। পঞ্চায়েতস্তরে এই প্রবণতা বেশি। জেলাপরিষদ স্তরে অবশ্য মহিলা জনপ্রতিনিধিদের স্বামীদের দাপট তুলনায় কম চোখে পড়ে।
তবে মহিলা জনপ্রতিনিধিরা অনেকেই জানাচ্ছেন, বর্তমানে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। মহিলারা সামনে থেকে কাজকর্ম করছেন। স্বামী, ছেলেমেয়েরা বাড়িতে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে তাঁরা পঞ্চায়েত অফিসে আসছেন না। পঞ্চায়েতের এক মহিলা জনপ্রতিনিধির কথায়, ‘‘ধরুন কোনও এলাকার কোনও এক দাপুটে নেতা আসন সংরক্ষণের কারণে নিজে দাঁড়াতে পারেননি। তিনি তখন তাঁর বোন, মা বা স্ত্রীকে দাঁড় করান। তাঁরা জয়ী হলেও ব্যাটন থেকে যায় সেই নেতার হাতে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কোনও গুরুত্ব থাকে না।’’
অবশ্য উল্টো ছবিও দেখা যায়। কয়েক জন মহিলা জনপ্রতিনিধি জানালেন, ‘‘আমরা জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগে থেকেই সক্রিয় রাজনীতি করি। দলীয় মিটিং-মিছিলে যাই। পরিবারের কেউ বা দলের কেউ আমাদের কাজে হস্তক্ষেপ করে না।’’
গাইঘাটা ব্লকের ঠাকুরনগর এলাকার বাসিন্দা শিপ্রা বিশ্বাস রায় এ বার ভোটে জেলাপরিষদের সদস্য হয়েছেন। ২০১৩ সালে তিনি পঞ্চায়েতের সদস্য হয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কাজে পরিবারের কেউ হস্তক্ষেপ করেন না। গ্রামের মানুষের কাছে মহিলা জনপ্রতিনিধিদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। কারণ, মহিলারা মানুষের সঙ্গে সহজে মিশতে পারেন। প্রয়োজনে বাড়ির অন্দনমহলে ঢুকে হাঁড়ির খবর নিয়ে আসতে পারেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মহিলা জনপ্রতিনিধিরা সহজে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হন না।’’
বনগাঁ ব্লকের ছয়ঘড়িয়া পঞ্চায়েতে এ বার প্রধান হয়েছেন উমা ঘোষ। তাঁর স্বামী প্রসেনজিৎ ঘোষ গত বার প্রধান ছিলেন। এ বার প্রধানের পদটি মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। উমা সেই অর্থে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তবে সামাজিক কাজকর্ম করতেন। প্রধান হিসাবে কতটা স্বাধীন ভাবে কাজকর্ম করছেন? উমা বলেন, ‘‘কাজ করতে সকলে আমায় খুবই উৎসাহ দিচ্ছেন। অভিজ্ঞতা না থাকলেও ওঁরাই আমাকে শিখিয়ে দিচ্ছেন। ভুল শুধরে দিচ্ছেন। প্রাথমিক ভাবে বাধা আসবেই। তবে আমি তা অতিক্রম করতে পেরেছি।’’ প্রসেনজিৎ বলেন, ‘‘উমা স্বাধীন ভাবে কাজ করছেন। কোথাও আটকে গেলে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করছি মাত্র। দৈনন্দিন কাজে কোনও হস্তক্ষেপ করি না।’’ উমা জানান, তিনি নিয়মিত পঞ্চায়েত অফিসে আসেন। মানুষের সমস্যা, অভাব-অভিযোগ শোনেন।