জেলা শাসক বলেন, “আগাম সতর্কতা হিসেবে সমস্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির উপর সর্বদা নজর রাখা হচ্ছে।” এ দিন বৈঠকের পর বকখালি ও ফ্রেজারগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরেও দেখেন উলাগানাথন।
দাবি: বাঁধ সংস্কারের দাবিতে কচুবেড়িয়া নদীবাঁধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ছবি: সমরেশ মণ্ডল
নদী বাঁধ সংস্কারের দাবিতে মন্ত্রীর সামনে বিক্ষোভ দেখালেন এলাকার মানুষ। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে সাগরের কচুবেড়িয়া এলাকায়।
সম্প্রতি ফের ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তার জেরে এ দিন ভেসেলে চেপে নদী বাঁধ পরিদর্শনে বেরিয়েছিলেন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা। সাগরের মুড়িগঙ্গা ১ পঞ্চায়েতের কচুবেড়িয়া, কশতলা, মুড়িগঙ্গা ও শিকারপুর এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। মন্ত্রীর নদী বাঁধ পরিদর্শনের সময় কচুবেড়িয়ার বেহাল নদী বাঁধের উপর দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। অভিযোগ, ওই এলাকায় প্রায় ২০০ মিটার নদী বাঁধ এখনও বেহাল। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, গত বছর ইয়াসে নদী বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত বাঁধ সারানো হয়নি। ঝড়ের পূ্র্বাভাসে নাম মাত্র মাটি ফেলা হয়েছে। কিন্তু নদী উত্তাল হলে ফের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয় বাসিন্দাদের। স্থানীয় বাসিন্দা মৌসুমী বারুই বলেন, “গত বছর ইয়াসে গবাদি পশু, ঘর বাড়ি সব ভেসে গিয়েছিল। বাঁধের অবস্থা খুব খারাপ। সারাবছর কোনও ব্যবস্থা নেই। শুধু ঝড় এলে বস্তায় করে মাটি এনে ফেলে। আমাদের বাড়ির পাশ থেকে মাটি নিয়ে বাঁধে দেওয়া হচ্ছে। আমরা কোথায় যাব, তার কোনও ব্যবস্থা নেই।” আর এক বাসিন্দা পিঙ্কি সিংহ বলেন, “আমাদের একটাই দাবি, কংক্রিটের পাকা বাঁধ হোক। নদী বাঁধের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা আসে শুনেছি। কিন্তু পুরো টাকার কাজ হয় না। যদি হতো, তাহলে বাঁধের এমন অবস্থা হতো না।”
বাঁধের সমস্যার কথা মেনে নেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “কচুবেড়িয়া থেকে শীলপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৮০০ মিটার বাঁধের অবস্থা খারাপ। গত বছর ইয়াসের পর নদী বাঁধগুলো মেরামতির কাজ হয়েছিল। কিন্তু একের পর এক কটালে বেহাল হয়ে পড়ে। শীলপাড়া থেকে কংক্রিটের স্থানীয় বাঁধের কাজ চলছে। কচুবেড়িয়াতে বাঁধের কাজের জন্য টেন্ডার হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হবে।”
এ দিকে এ দিন নামখানা ব্লক দফতরে একটি বৈঠক করেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলাগানাথন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রীও। দুর্যোগ মোকাবিলা নিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা করেন জেলাশাসক। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, নামখানা ও গোসাবাতে দু’টি এনডিআরএফ টিম মোতায়েন করা হয়েছে। সাগর ও পাথরপ্রতিমায় দু’টি এসডিআরএফ টিম মোতায়েন রাখা হয়েছে। ছ’টি অতিরিক্ত কুইক রেসপন্স টিম মোতায়েন আছে জেলাতে। ১০৫টি সাইক্লোন সেন্টার এবং ৬৪০টি স্কুলে দুর্গতদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষকে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন নিচু এলাকা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। গাছ কাটার জন্য ৪০টি টিমকে তৈরি রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে ২০০টি বড় আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বিভিন্ন এলাকার ত্রাণকার্য চালানোর জন্য। নদী বাঁধ মেরামতের জন্য ১৫টি গাড়িকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নজরদারি চালানোর জন্য লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোস্টগার্ড এয়ারক্রাফট নিয়েও সমুদ্রে নজরদারি চলছে। এছাড়াও ব্লকগুলিতে চাল, শুকনো খাবার, কাপড় ওষুধ মজুত রাখা হয়েছে। সাগর, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা এবং গোসাবাতে দুই লক্ষেরও বেশি জলের বোতল মজুত রাখা হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতেও মেডিক্যাল ও অন্যান্য সরঞ্জাম তৈরি রাখা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা বিভিন্ন ব্লক ও মহকুমা শাসকের অফিসে কন্ট্রোল রুম খোলা থাকছে। সঙ্গে জেলাশাসকের অফিসেও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা শাসক ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আধিকারিকদেরকে নিয়োগ করা হয়েছে বিভিন্ন দুর্গম ব্লকগুলিতে।
জেলা শাসক বলেন, “আগাম সতর্কতা হিসেবে সমস্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির উপর সর্বদা নজর রাখা হচ্ছে।” এ দিন বৈঠকের পর বকখালি ও ফ্রেজারগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরেও দেখেন উলাগানাথন।