—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
পশ্চিমবঙ্গের বাইরে কাজ করে যা উপার্জন হয়, তার থেকে কিছু কম আয় হলেও বাড়িতে থেকে রাজ্যের মধ্যেই কাজে আগ্রহী অনেক পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁরা রাজ্যে ফিরতেও চান। কিন্তু অনেকেরই বক্তব্য, এ রাজ্যে কাজের সুযোগ কম। ফলে ইচ্ছে থাকলেও তাঁরা ফিরতে পারছেন না। তাঁরা চান রাজ্য সরকার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুক এলাকাতেই।
হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের যোগেশগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা প্রতাপ হালদার গত দশ বছর ধরে তামিলনাড়ুতে থাকতেন। গেঞ্জি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। প্রতাপ জানান, সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কাজ করে দিনে ৫০০ টাকা আয় হত তাঁর। সব মিলিয়ে মাসে ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু মাসে ঘর ভাড়া ৩৫০০ টাকা, খাওয়া খরচ ২৮০০ টাকা। মাসের শেষে হাতে থাকে ৭৭০০ টাকা। প্রতাপ বলেন, “স্ত্রী সঙ্গেই থাকতেন কিন্তু অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় গ্রামে ফিরেছি কয়েক মাস হল। গ্রামে কাজ করে বেশি উপার্জন হয় না। তাই যেতে হয় ভিন্ রাজ্যে। কলকাতায় কাজের সুযোগ পেলে দু’হাজার টাকা কম পেলেও কাজ করতাম। অন্তত বাড়ির কাছাকাছি তো থাকতে পারতাম!”
হাসনাবাদ থানার হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত মণ্ডল বেঙ্গালুরুতে প্রায় ন’বছর ধরে লোহার কারখানার শ্রমিকের কাজ করেন। সুব্রত ফোনে জানান, লোহার শ্রমিকের কাজে খুব কষ্ট। তবে দিনে ৮ ঘণ্টা কাজ করে মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় হয়। থাকা-খাওয়ার খরচ হাজার ছয়েক। সুব্রত বলেন, “বাড়িতে বাবা-মা, স্ত্রী আছেন। সকলকে ছেড়ে থাকতে মোটেই ভাল লাগে না। কিন্তু কলকাতা বা আমাদের গ্রামে তো কাজ পেলাম না, তাই বাধ্য হয়ে এখানে পড়ে আছি।”
হাসনাবাদ ব্লকের আর এক বাসিন্দা ফিলিটাস মণ্ডল জানান, তিনি অন্ধ্রপ্রদেশে ২০১৫ সাল থেকে ইটভাটার শ্রমিকের কাজ করেন। ভোর থেকে সন্ধে পর্যন্ত কাজ করতে হয়। দিনে ৫৫০ টাকা পান। সব মিলিয়ে সাপ্তাহিক উপার্জন ৩৩০০ টাকা। সাপ্তাহিক খরচ ১৫০০ টাকা। তিনি বলেন, “বাড়িতে স্ত্রী ও দুটো বাচ্চা। তাদের ফেলে ভিন্ রাজ্যে কি মন টেকে? কিন্তু উপায় নেই। তাই যেতে হয়। তবে উপার্জন বেশি হলেও খরচও অনেক। রাজ্যে দিনে অন্তত ৪০০ টাকা আয়ের সুযোগ পেলে ফিরে যেতাম।”
হাসনাবাদ ব্লকের আমলানি গ্রামের বাসিন্দা দীপঙ্কর সাঁতরা টাকির সরকারি কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স করে কাজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে গত পাঁচ বছর ধরে কর্ণাটকের একটি রেস্তরাঁয় কাজ করেন। বারো ঘণ্টা কাজ করে মাসে ১০ হাজার টাকা উপার্জন হয় তাঁর। বিভিন্ন ব্যয়ের পরে তাঁর হাতে থাকে ৭ হাজার টাকা। দীপঙ্কর বলেন, “কলেজের পড়াশোনা করার পরেও এলাকায় কোনও কাজ না পেয়ে শেষে এখানে এসেছি। বাড়িতে বাবা-মা, স্ত্রী, দুই সন্তান আছেন। কিন্তু আমি নিরুপায়।”