বন্ধ মিড-ডে মিল। স্কুলে পড়ে রয়েছে রান্নার বাসনপত্র। নিজস্ব চিত্র
বড়দের ভুলের মাসুল গুনছে খুদে পড়ুয়ারা।
ঋণের টাকা শোধ না করায় স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাঙ্ক। তার জেরে দেড় মাস ধরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিলছে না মিড ডে মিলের খাবার। একই কারণেই সরকারের থেকে পাওয়া ৫২ হাজার ২০০ টাকাও ছাত্রছাত্রীদের পোশাকের জন্য মেলেনি। এ সবের কারণে দেগঙ্গার উত্তর কালিয়ানির দেবেন্দ্রলাল মৈত্র স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯৭ জন পড়ুয়ার লেখাপড়া শিকেয় উঠেছে।
স্কুল সূত্রে খবর, পুজোর ছুটির পরে ৩০ অক্টোবর থেকে স্কুল চালু হয়। সেই সময় থেকেই বন্ধ রয়েছে মিড ডে মিলের রান্নাবান্না। অভিভাবকেরা জানান, খাবার, পোশাক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্কুলে যেতে চাইছে না ছেলেমেয়েরা। স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, রান্না ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বাসনপত্র। পুজার ছুটির আগে অগস্ট মাসের খাবারের তালিকা এখনও লেখা রয়েছে বোর্ডে। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র তুষার পাল বলে, ‘‘স্কুলে আর খেতে দেয় না।’’ চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ঋত্বিকা পাত্রের কথায়, ‘‘কেউ স্কুলেও আসে না।’’
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দুলালচন্দ্র মিস্ত্রি বলেন, ‘‘মিড ডে মিল বন্ধ বলে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসতে চাইছে না। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর থেকে সব কথা জানার পরে ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকেও অনুরোধ করেছিলাম, খাবারটা বন্ধ করবেন না। ওঁরা শোনেননি। স্কুলের পোশাকের টাকাও আটকে গিয়েছে।’’
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরা ২০১২ সালে ৫০ হাজার এবং ২০১৬ সালে ৭৫ হাজার টাকা ঋণ নেয়। বারবার বলা সত্ত্বেও ঋণ শোধ করেনি। এর পরে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে রেখে ঋণ শোধের আবেদন করা হয়। তাতেও সাড়া না দেওয়ায় এই বিপত্তি।
কী বলছে ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠী?
গোষ্ঠীর দলনেত্রী নমিতা মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের গোষ্ঠীর তিন সদস্যা ঋণ শোধ করতে রাজি না হওয়ায় টাকা দিতে পারিনি। পরে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বললেও ব্যাঙ্ক রাজি হয়নি। টাকা বন্ধ করে দেওয়ায় মিড ডে মিলের রান্নাও বন্ধ করে দিতে হয়েছে।’’
এ ব্যাপারে দেগঙ্গার বিদ্যালয় পরিদর্শক শাহনওয়াজ আলম বলেন, ‘‘সরকার টাকা দিচ্ছে অথচ স্কুলের ছেলেমেয়েরা খাবার পাচ্ছে না, এর চেয়ে দুঃখজনক কিছু হতে পারে না। শীঘ্রই প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টির সমাধান করা হবে।’’