বেহাল: বন্ধ হয়ে আছে স্কুল। নিজস্ব চিত্র
পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে কমতে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে দাঁড়ায় ৩ জনে।
মাস তিনেক পরে তারাও অন্যত্র ভর্তি হয়ে যায়। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে কোনও পড়ুয়া নতুন করে ভর্তি হয়নি।
এমনই অবস্থা সাগর ব্লকের মায়াপুর জুনিয়র হাইস্কুলের। বর্তমানে স্কুলটি বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। স্কুল চত্বরে ঘুরে বেড়ায় গরু-ছাগল।
অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুলে প্রধান শিক্ষক-সহ দু’জন স্থায়ী শিক্ষক থাকলেও কেউই স্কুলে আসতেন না। এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়ারাও আর আসে না। আরও অভিযোগ, বাড়িতে বসে বছরের পর বছর বেতন নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সাগর ব্লকের রামকরচর পঞ্চায়েতের খানসাহেব আবাদ গ্রামে ২০১৩ সালে তৈরি হয়েছিল মায়াপুর জুনিয়র হাইস্কুল। সে সময়ে দু’জন স্থায়ী শিক্ষক ও তিন জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে ওই বিদ্যালয়ে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়। বছর তিনেক পরে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বয়স ৬৫ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা অবসর নেন। কিন্তু তাঁদের পরিবর্তে আর কোনও শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি।
অভিযোগ, স্থায়ী দু’জন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষক মাঝে মধ্যে স্কুলে আসতেন। গত কয়েক বছরে অন্য শিক্ষিকার দেখাই মেলেনি।
স্কুল সূত্রের খবর, ২০১৩ সালে চারটি ক্লাসে ৭৫ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়। কিন্তু স্কুলটিতে এক দিকে শিক্ষকের সংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকে, অন্য দিকে বিষয়ভিত্তিক নতুন শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় পড়ুয়ারা অন্য স্কুলে চলে যেতে শুরু করে।
স্কুলের পাশেই স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পারুল পড়্যার বাড়ি। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ভালই ছিল। কিন্তু শিক্ষকেরা সময়ে স্কুলে আসতেন না। একটা ক্লাস নিয়ে বাড়ি চলে যেতেন। ধীরে ধীরে পড়ুয়ার সংখ্যা কমে স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক ভৃগুরাম দাস বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষকের গাফিলতির জন্যই স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সপ্তাহে এক-দু’দিন স্কুলে আসতেন। এক ঘণ্টা থেকে চলে যেতেন। বাধ্য হয়ে বাড়ির ছেলেমেয়েদের দূরের স্কুলে ভর্তি করেছি।’’
এ বিষয়ে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বার বার ফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজেরও জবাব দেননি। সাগর উত্তর চক্রের স্কুল পরিদর্শক মতিয়ার রহমান গাজি বলেন, ‘‘বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাঁরা যা সিদ্ধান্ত নেবেন, সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।’’
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।