গাছ পড়ে বন্ধ রাস্তা। সাগরে।
নেওয়া হয়েছিল বিপর্যয় মোকাবিলার সব রকম ব্যবস্থা। নদীর ধারের বাসিন্দাদের সরানো হয়েছিল ত্রাণ শিবিরে।—বুলবুলের আভাস পাওয়া মাত্রই নড়েচড়ে বসেছিল প্রশাসন। তাদের তৎপরতাতেই বাঁচল বহু প্রাণ।
টানা তিন দিনের বৃষ্টি। সেই সঙ্গে বুলবুলের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা তথা সাগরদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে ভেঙে পড়েছে প্রচুর মাটির বাড়ি, গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি। এমনকী মোবাইল টাওয়ার পর্যন্ত ভেঙে গিয়েছে।
এত বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরেও কী ভাবে মানুষের প্রাণহানি আটকানো সম্ভব হল?
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কথায়, ‘‘বুলবুলের আগাম আভাস পাওয়ায় পর থেকেই আমরা সব জায়গায় মাইকে প্রচার শুরু করি। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে দেওয়া হয়নি। মানুষকে সতর্ক করি।’’
তা ছাড়া বুলবুলের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিপর্যয় মোকাবিলার সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। মূলত জেলা প্রশাসনের তৎপরতায় জেলার সাগরদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ-সহ সুন্দরবনের উপকূলবর্তী ব্লক এলাকাগুলিতে থেকে ‘রেড-অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছিল। বুলবুলের মোকাবিলায় নদীর ধার থেকে, মাটির বাড়ি থেকে এবং নিচু এলাকা থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে, বিভিন্ন স্কুলে এবং ত্রাণ শিবিরে।
জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে দাবি করছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। শুধু তাই নয়, শুক্রবার বিকেল থেকেই বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকে প্রচার করে সচেতন করা হয়েছিল। ওই সময় গভীর সমুদ্রে মৎস্যজীবীদের মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল।
যে সব মৎস্যজীবীরা মাছ ধরতে গিয়েছিলেন তাঁদের জরুরি ভিত্তিতে ফিরিয়ে আনা হয়। পর্যটকদের সুন্দরবন ভ্রমণের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিপর্যয় মোকাবিলা টিম, স্পিড বোট-সহ প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।
গত দু’দিন ধরে জেলাশাসক পি উলগানাথন সমস্ত সরকারি দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেন। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে কাকদ্বীপেই রয়েছেন জেলাশাসক। বুলবুলের মোকাবিলায় জেলার সমস্ত সরকারি কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়। তবে ঝড়ের দাপটে উপকূলবর্তী গোসাবা, বাসন্তী, সাগর, নামখানা ও পাথরপ্রতিমা এলাকায় প্রায় ২৫টি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়েছে। সাগরে বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার-সহ বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়েছে। আপাতত ওই সব ব্লকের অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলা বিদ্যুৎ বন্টন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৪০টি দল মেরামতের কাজ শুরু করেছে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করা হবে বলে প্রশাসনের আশা।