kakdwip

আনন্দ থেকে দূরে কালীপদের পরিবার

প্রশাসন সূত্রের খবর, শীঘ্রই মৃত মৎস্যজীবী পরিবারগুলির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে যাবে। নিখোঁজ মৎস্যজীবী পরিবারগুলির জন্য কিছু ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়েছেন মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী।

Advertisement

সমরেশ মণ্ডল

কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:০১
Share:

অনেকটাই ফিকে পুজোর আনন্দ। প্রতীকী ছবি।

মাছ ধরতে বেরিয়ে সম্প্রতি দুর্ঘটনার মুখে পড়েছে বেশ কিছু ট্রলার। একাধিক মৎস্যজীবী নিখোঁজ হয়েছেন। মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। মৃত বা নিখোঁজ সেই সব মৎস্যজীবীদের পরিবারের সদস্যদের কাছে এ বার অনেকটাই ফিকে পুজোর আনন্দ।

Advertisement

কাকদ্বীপ মহকুমা এলাকায় প্রায় এক লক্ষ মৎস্যজীবীর বসবাস। সুন্দরবনের নদী, খাল, বিলে মাছ কাঁকড়া ধরে তাঁদের কোনও মতে সংসার চলে। নিখোঁজ বা মৃত মৎস্যজীবীদের পরিবাররগুলির অবস্থা আরও করুণ। নুন আনতে পান্তা ফুরোচ্ছে অনেক পরিবারেই।

জুন মাসে ট্রলার দুর্ঘটনায় নিখোঁজ হন কাকদ্বীপের অক্ষয়নগরের বাসিন্দা কালীপদ দাস। এফবি সত্যনারায়ণ নামে একটি ট্রলারে মাছ ধরতে বেরিয়েছিলেন কালীপদ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ট্রলারের পাটাতন ফেটে জল ঢুকে ট্রলার ডুবে যায়। ২০ জন মৎস্যজীবীর মধ্যে ১৯ জনকে উদ্ধার করা গেলেও কালীপদের খোঁজ মেলেনি।

Advertisement

কালীপদর এগারো বছরের একটি মেয়ে ও দেড় বছরের ছেলে রয়েছে। স্ত্রী চম্পা জানান, ছেলেমেয়েরা এখনও বাবার ফেরার পথ চেয়ে বসে। চম্পার দাবি, দুর্ঘটনার পর অনেকের কাছ থেকেই অনেক আশ্বাস মিলেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউই সে ভাবে সাহায্য করেননি। এখন লোকের বাড়িতে কাজ করে কোনওমতে সংসার চলছে।

চম্পা বলেন, “মেয়ে রিয়া চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। ওর বাবাই ভর্তি করিয়েছিলেন। পাড়ায় ওর বয়সি ছেলেমেয়েদের পুজোয় নতুন জামাকাপড় হয়েছে। সেই খবর এসে আমায় বলে মেয়ে। তখন ওর মুখের দিকে তাকাতে পারি না।” তিনি আরও বলেন, “ওদের বাবা থাকলে এই দিন দেখতে হত না। এত দিনে নতুন জামাকাপড় চলে আসত। পুজোর ক’টা দিন সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতেন না। বাড়িতেই সপরিবার মণ্ডপের সামনে আনন্দে মেতে থাকতেন।”

চম্পার মতোই এমন সব মুহূর্ত হঠাৎই ঝাপসা হয়ে গিয়েছে কাকদ্বীপের অনেক মৎস্যজীবী পরিবারের কাছে। কাকদ্বীপের মৎস্যজীবী সংগঠন সূত্রের খবর, ২০১৬ সালে নিখোঁজ মৎস্যজীবীর সংখ্যা ২৩ জন, মৃত ১৮ জন। ২০১৭ সালে মৃত মৎস্যজীবীর সংখ্যা ৫ জন। ২০১৮ সালে নিখোঁজ মৎস্যজীবীর সংখ্যা ৭ জন, মৃত মৎস্যজীবীর সংখ্যা ২০ জন। ২০১৯ সালে নিখোঁজ ২৬ জন, মৃত ৮ জন। ২০২০ সালে নিখোঁজ একজন, মৃত ২ জন। বর্তমানে ২০২২ সালে এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ একজন, মৃত চারজন।

অভিযোগ, সরকারের তরফে সে ভাবে সাহায্য করা হচ্ছে না। মৃত মৎস্যজীবীদের ক্ষেত্রে দেহ উদ্ধার হলে ২ লক্ষ টাকা করে সরকারি সাহায্য পাওয়ার কথা। তবে অনেক মৃত মৎস্যজীবীর পরিবারের অভিযোগ, তা মিলছে না। নিখোঁজ মৎস্যজীবীদের ক্ষেত্রে সেই সাহায্যটুকুরও ব্যবস্থা নেই।

প্রশাসন সূত্রের খবর, শীঘ্রই মৃত মৎস্যজীবী পরিবারগুলির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে যাবে। নিখোঁজ মৎস্যজীবী পরিবারগুলির জন্য কিছু ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়েছেন মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী। তাঁর কথায়, “মৃত ও নিখোঁজ মৎস্যজীবী পরিবারগুলিকে খুব তাড়াতাড়ি আমরা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মাধ্যমে অর্থ সাহায্য করব। তার ব্যবস্থা হচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement