কেটে ফেলা হয়েছে ম্যানগ্রোভ। ছবি: সমরেশ মণ্ডল Sourced by the ABP
প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে ম্যানগ্রোভের প্রয়োজনীয়তার কথা বারবার বলছেন পরিবেশবিদেরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ঘূর্ণিঝড়ের দাপট ও বাঁধ ভাঙা থেকে সুন্দরবনকে বাঁচাতে ম্যানগ্রোভ রোপণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও পাথরপ্রতিমার শ্রীনারায়ণপুর পূর্ণচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের তারানগর গ্রামে কালনাগিনী নদীর খাঁড়ির চরের ম্যানগ্রোভ কেটে মেছোভেড়ি তৈরির অভিযোগ উঠল স্থানীয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে। গ্রামবাসীরা ইতিমধ্যেই এ নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন।
পঞ্চায়েত প্রধান বিকাশকান্তি পতি বলেন, ‘‘ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করে কোনও কাজ করা উচিত নয়। বিষয়টি শুনেছি। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’ বিডিও মহম্মদ ইজরাইল বলেন, ‘‘গ্রামবাসীরা আমার কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। ওই এলাকায় ম্যানগ্রোভ কেটে ভেড়ি তৈরি চলছে। আমরা তদন্ত করছি। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছুদিন আগে পর্যন্ত খাঁড়ির দু’ধারের চরে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল ছিল। সরকারের পক্ষ থেকেই ম্যানগ্রোভ সৃজন করা হয়েছিল। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে কিছু লোক সেই ম্যানগ্রোভ ও চরের মাটি কেটে ভেড়ি তৈরি করছে। বারণ করা হলেও কর্ণপাত করছে না। এমনকি, মাটি চাপা দিয়ে ছোট ছোট ম্যানগ্রোভ চারাও মেরে ফেলা হচ্ছে। গ্রামবাসীরা প্রথমে ঢোলাহাট থানায় খবর দিয়েছিলেন। পুলিশ গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। তারপরে ফের তা শুরু হয়েছে বলে গ্রামবাসীদের দাবি।
সরকারি জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে বলে বৃহস্পতিবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছিল রাজ্য সরকারের এক শ্রেণির আমলা এবং পুলিশ কর্তাদের। সেই আবহেই বেআইনি ভাবে জমি দখল ও অরণ্য ধ্বংস করে ভেড়ি তৈরির অভিযোগ সামনে এসেছে পাথরপ্রতিমায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কেবল পাথরপ্রতিমাই নয়, সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করে কোথাও ভেড়ি, কোথাও বাড়ি, কোথাও আবার দোকানঘর গড়ে উঠছে।
স্থানীয়দের ক্ষোভ, প্রশাসন সব জেনেও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে দিনের পর দিন ম্যানগ্রোভ নিধন চলছে। রহমান শেখ নামে তারানগরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় নদীর চরের গাছ কেটে ভেড়ি তৈরি হচ্ছে। যারা এই কাজ করছে, তারা কাউকে মানছে না। প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।’’ পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কথাও মান্যতা পাচ্ছে না। দুর্বৃত্তায়ন এমন জায়গায় পৌঁছেছে। মুখ্যমন্ত্রী ম্যানগ্রোভ লাগাতে বলেছিলেন। সেই ম্যানগ্রোভ লাগানোর পরে তা আবার কেটে নেওয়া হচ্ছে। এটা প্রশাসন ও পরিবেশের পক্ষে দুর্ভাগ্যজনক।’’