প্রতীকী ছবি।
হাতে রক্তমাখা ছুরি, পরনের পোশাকেও টাটকা রক্তের ছিটে! ভাবলেশহীন মুখে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এমনই এক যুবককে দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন টিটাগড় থানার ডিউটি অফিসার। শুক্রবার সকালে ঘড়ির কাঁটা তখন ন’টা ছুঁইছুঁই। পুলিশকর্মীরা জানান, ওই যুবক শান্ত গলায় স্বীকার করেন, তিনি তাঁরকাকাকে খুন করেছেন। জানা যায়, খুন হওয়া ওই ব্যক্তির নাম মহম্মদ আসলাম (৫৮)। এ দিনের এই ঘটনার স্থান টিটাগড় বাজার। এ দিকে, তত ক্ষণে থানার বাইরে বিটি রোডে জনরোষের পারদ চড়ছে। মারমুখী জনতাকে সামলাতে তৎপর পুলিশও।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, থানার অনতিদূরে টিটাগড় বাজারে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের পিছনে মহম্মদ আসলাম ও আখতার আলম ওরফে আরজুর বাড়ি। সম্পর্কে তাঁরা কাকা-ভাইপো। আসলাম বেসরকারি ব্যাঙ্কটিতে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন। আখতার ফুটপাতে হকারি করেন। বহু বছর ধরে দশ কাঠা জমিতে জ্ঞাতিদের সঙ্গে বাস করছিলেন আসলাম। ওই জমিরই এক কাঠা, আসলামের বাবা মহম্মদ আব্বাস লিখে দিয়েছিলেন নাতি আখতারের নামে। সেই দলিল পাওয়া নিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে কাকা ও ভাইপোর মনোমালিন্য চলছিল।
তদন্তকারীরা জানান, এ দিন কাজে যাওয়ার আগে বাড়ির সামনে রাস্তার ধারের কলতলায় বসে শ্যাম্পু মেখে স্নান সারছিলেন আসলাম। তখনই আখতার পিছন থেকে এসে তাঁর মুখ চেপে ধরে ছুরি দিয়ে গলার নলি কেটে দেয়। ছটফট করতে করতে এক সময়ে স্থির হয়ে যান ওই প্রৌঢ়। ব্যারাকপুর বিএন বসু মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শোয়েব আলম বলেন, ‘‘সামনে থেকে আসলামকে মারতে পারবে না বলেই আখতার বোধহয় সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। আসলাম যখন স্নান শুরু করেন, কলতলার সামনে দিয়ে বার দুয়েক খৈনি হাতে পায়চারি করেছিল সে। চোখে-মুখে সাবান মাখা অবস্থায় কিছু বোঝার আগেই পিছন থেকে এসে ছুরিটা গলায় টেনে দিল।’’
আখতারকে এ দিন ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ১০ দিনের পুলিশি হেফাজত দেন। ঘটনায় উদ্বিগ্ন কমিশনারেটের পুলিশ আধিকারিকেরাও। টিটাগড়ে খুন, ধর্ষণ, লুট, বোমাবাজি রোজকার ঘটনা। কিন্তু প্রবল আক্রোশে কাউকে খুন করে থানায় গিয়ে শান্ত ভাবে আত্মসমর্পণের ঘটনা টিটাগড় তো বটেই, গোটা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের থানাগুলির অপরাধের রেকর্ডে সাম্প্রতিক সময়ে পাওয়া যায়নি। কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মহম্মদ আখতার অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল, এমন কোনও তথ্য নেই। চূড়ান্ত মানসিক অবসাদ থেকেই হয়তো এই ঘটনা ঘটিয়েছে সে। পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পরে একদম চুপ করে গিয়েছে।’’
যে বেসরকারি ব্যাঙ্কে মহম্মদ আসালম কাজ করতেন, তার এক আধিকারিক সুধীরকুমার বর্মা বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবারও কাজ করেছেন ওই ব্যক্তি। দু’বছর বাদে অবসর নিতেন। খুব মিশুকে ছিলেন। খুন হয়ে গিয়েছেন ভাবতেই পারছি না।’’