কর্ম সংস্থান/ ৬
aloor chop

চপ ভাজছেন এমএ পাশ শঙ্কর

শঙ্কর অবশ্য জানান, বিষয়টা তেমন কিছু নয়। চপের ব্যবসা লাভজনক বলে শুনেছিলেন। সামান্য পুঁজি ব্যবহার করে নেমে পড়েন কাজে। বনগাঁ শহরের স্টেডিয়াম মোড় এলাকায় চপের দোকান শঙ্করের।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:১২
Share:

তাগিদ: চপ তৈরির প্রস্তুতিতে ব্যস্ত শঙ্কর পান্ডে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

এমএ পাশ করেছিলেন। স্বপ্ন ছিল, সরকারি চাকরি করবেন। একের পর এক পরীক্ষা দেন। চাকরি মেলেনি। এ দিকে, সংসারের চাপ এসে পড়ছিল। শেষমেশ বছর সাত-আট আগে চপের দোকান খুলে বসেন বনগাঁ শহরের বাসিন্দা শঙ্কর পান্ডে।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী বার বারই বলেছেন, তেলেভাজার দোকান হতে পারে বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ। তা নিয়ে শোরগোল কম চলছে না রাজ্য রাজনীতিতে। বিকল্প কর্মসংস্থানের ‘তেলেভাজা মডেলকে’ নিয়মিত কটাক্ষ করছেন বিরোধীরা।

তবে শঙ্করের জীবনে এটাই ঘোর বাস্তব। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শই কি তবে অনুসরণ করছেন? শঙ্কর অবশ্য জানান, বিষয়টা তেমন কিছু নয়। চপের ব্যবসা লাভজনক বলে শুনেছিলেন। সঙ্গীও পেয়ে যান। সামান্য পুঁজি ব্যবহার করে নেমে পড়েন কাজে। বনগাঁ শহরের স্টেডিয়াম মোড় এলাকায় চপের দোকান শঙ্করের। তাঁর ভায়রাভাই বিশ্বনাথ রুদ্রের সঙ্গে যৌথ ব্যবসা। শঙ্করের বয়স এখন প্রায় ছেচল্লিশ। গত কয়েক বছর ধরে করছেন চপ ভাজার কাজ। তাঁর হাতে তৈরি চপের চাহিদা আছে এলাকায়। সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে দোকানে চলে আসেন। জোগাড়যন্ত্র সেরে দুপুরে একবার বাড়ি গিয়ে স্নান-খাওয়ার সুযোগ মেলে। বিকেল থেকে শুরু হয় চপ-বেগুনি-ডালবড়া ভাজার কাজ। ভিড় হয় ভালই। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বাড়ি ফেরেন। দিনে ৭০০-৮০০ রোজগার। সেই টাকা দু’ভাগ হয়। তা দিয়েই সংসার চলে শঙ্করের। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ পাশ করেছিলেন। স্নাতক হয়েছেন বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয় থেকে। রেল, এসএসসি, ফুড সাপ্লাই-সহ নানা দফতরের পরীক্ষা দিয়েছেন শঙ্কর। প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক পদের পরীক্ষাতেও বসেছিলেন। জানালেন, পরীক্ষা ভাল হলেও চাকরি মেলেনি। শঙ্কর বলেন, ‘‘কেন সরকারি চাকরি পেলাম না, আজও বুঝতে পারলাম না। চেষ্টা তো কম করিনি। একবার রেলের লিখিত পরীক্ষায় পাশও করেছিলাম। কটকে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় পিঠে বস্তা নিয়ে দৌড়তে হয়েছিল। সেখানেও আমাকে বাদ দেওয়া হল!’’

Advertisement

একটা সময়ে শঙ্কর বুঝতে পারেন, এ ভাবে চলতে থাকলে হতাশা বাসা বাঁধবে। ক্রমশ তলিয়ে যাবেন মনখারাপের জটিল আবর্তে। সরকারি চাকরির মুখ চেয়ে বসে থাকলে চলবে না বলে মনস্থ করেন। তারপরেই চপের দোকান খোলার সিদ্ধান্ত।

শঙ্করের বাড়ি বনগাঁ শহরের কুড়িরমাঠ এলাকায়। স্ত্রীকে নিয়ে কলেজপাড়া বটতলা এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। শঙ্করের স্ত্রী গীতা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। নিজের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি— দু’দিকের দায়িত্বই সামলাতে হয় শঙ্করকে। সরকারি চাকরিতে নিয়োগে-দুর্নীতির ঘটনা তাঁকে ব্যথিত করে। শঙ্কর বলেন, ‘‘সব দেখেশুনে এখন তো মনে হচ্ছে, শিক্ষার কোনও দামই নেই। থাকলে আমার মতো শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের বেকার হয়ে থাকতে হত না। চাকরি পেতে গেলে মনে হয় টাকা থাকাটা জরুরি!’’

এমএ পাশ যুবক যখন চপের ব্যবসা শুরু করলেন, লোকজন কেমন ভাবে নিয়েছিলেন বিষয়টি? শঙ্কর জানান, সকলে প্রশংসাই করেন। উৎসাহ দেন। কোনও কাজই ছোট নয় বলে মনে করেন শঙ্কর। তাই চাকরি না পেলেও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েননি। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষিত হয়েছি, জ্ঞান অর্জন করেছি। চাকরি না পাই, বিদ্যা তো কেউ কেড়ে নিতে পারবে না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement