ছেলের ছবি হাতে আভা। ছবি: সুজিত দুয়ারি।
ভোটের ফল জেনে যেতে পারেননি বিপ্লব। ভোটের দিনই কিছু লোক পিটিয়ে খুন করে হাবড়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল প্রার্থী বিপ্লব সরকারকে।
ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বিপ্লব।
ফের আর একবার ভোট এসে পড়েছে। হাবড়ার বেড়গুমের বাসিন্দা বিপ্লবের মা আভা এখনও ছেলের কথা উঠলেই চোখের জল মোছেন।
শুক্রবার কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে এলাকায় গিয়েছিলেন গোবরডাঙার ওসি উৎপল সাহা। সঙ্গে ছিলেন নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা। রুটমার্চ হচ্ছে ক’দিন ধরেই। এ দিন বিপ্লবের বাড়িতে যান কমিশনের লোকজন। কথা বলেনআভার সঙ্গে। নিরাপত্তার আশ্বাস দেন। সন্তানহারা মায়ের একটাই কথা, ‘‘ভোটে আমার মতো মতো কোনও মায়ের কোল যেন খালি না হয়।’’ কমিশনের প্রতিনিধিদের কাছে আভা বলেছেন, নিরাপত্তার ব্যবস্থা যেন কড়া থাকে।‘‘লোকসভা ভোটের মতো এমন বাহিনী থাকলে হয় তো আমার ছেলেটাকে মরতে হত না’’— আফসোস আভার।
কী হয়েছিল গত বছর ১৪ মে দিনটিতে?
সে দিন ছিল পঞ্চায়েত ভোট। বাসিন্দারা জানালেন, সকাল থেকে সব ঠিকঠাকই চলছিল। দুপুরের পর থেকে উত্তেজনা ছড়াতে থাকে। শুরু হয় বহিরাগত বাইক বাহিনীর তাণ্ডব। তাদের অনেকের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। ভোটগ্রহণ পর্বতখন প্রায় শেষের মুখে। বিকেল ৫টা হবে। ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে বিপ্লব কাছেই অস্থায়ী দলীয় কার্যালয়ে বসেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েকজন।
সেখানেই চড়াও হয় কিছু লোক। লাঠিসোঁটা নিয়ে তারা মারধর শুরু করে। বাকিরা পিঠ বাঁচাতে পারলেও মার খান বিপ্লব ও তাঁর সঙ্গী অনুপ দাস নামে এক তৃণমূল কর্মী। নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মারা যান বিপ্লব। দীর্ঘচিকিৎসার পরে বাড়ি ফেরেন অনুপ। বিপ্লবের স্ত্রীকে রাজ্য চাকরি দেয়।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আতঙ্ক কাটেনি অনুপের। তিনি বলেন, ‘‘অনেকে ধরা পড়েছিল। আবার অনেক অভিযুক্ত এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে বাইরে। আমরা আতঙ্কিত।
ঘটনার স্মৃতি এখনও টাটকা স্থানীয় লোকজনের কাছেও। এলাকাটি বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। ভোটের দিন ফের গোলমাল ছড়াবে না তো, প্রশ্ন অনেকেরই। তবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল, নাকা তল্লাশি দেখে ভরসা পাচ্ছেন বলেজানালেন তাপস পাল, তৃপ্তি বিশ্বাস, অঞ্জলি বিশ্বাসরা।
বিপ্লবকে খুনের ঘটনায় বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছিল লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য বাহিনীর রুটমার্চে বাড়াবাড়িই দেখছেন। হাবড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অজিত সাহা বলেন, ‘‘বিপ্লবকে খুনেরঘটনার পরে বিজেপির নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙে গিয়েছে। বাহিনী পাঠিয়ে তাদের মনোবল বাড়ানো হচ্ছে।’’
বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বিপ্লব হালদারের অবশ্য দাবি, ‘‘জনরোষে বিপ্লবের মৃত্যু হয়েছিল ওরা ব্যাপক সন্ত্রাস চালিয়েছিল। কেন্দ্রীয় বাহিনী আসায় মানুষ ভরসা পাচ্ছেন।’’