টাকিতে জয়ী তৃণমূল প্রার্থীকে নিয়ে সমর্থকদের উচ্ছ্বাস।—নিজস্ব চিত্র।
বসিরহাট মহকুমার ৩টি পুরসভার ফলাফল বলছে, এখানে বামপ্রার্থীদের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। তা না হলে গত ২০১০ সালে যেখানে বসিরহাট পুরসভায় বামেরা একক ভাবে ৫টি আসন দখল করেছিল, এ বারে তা কমে মাত্র ২টিতে এসে ঠেকেছে। টাকি পুরসভাতেও বামেদের আসন কমেছে। গতবারে তারা পেয়েছিল ৭টি আসন। এ বার সেখানে কমে ৫টি আসনে জয়ী হয়েছে বামেরা। বাদুড়িয়াতেও বামেদের রক্তশূন্যতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত বারে এই পুরসভায় বামেরা ৭টি আসনে জয়ী হলেও এ বারে সেখানে মাত্র ২টিতে সাফল্য পেয়েছে তারা।
সামনেই ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এই ফলাফলে যথেষ্ট চিন্তিত বাম নেতৃত্ব। বিশেষ করে একটা সময়ে বসিরহাট এবং টাকি ছিল বামেদের শক্ত ঘাঁটি। এখনও বাদুড়িয়া ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদে বিরোধীদের থেকে এগিয়ে বামেরা। এই পরিস্থিতিতে তিনটি পুরসভায় ৫৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ৯টি আসনে জয়লাভ করায় চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে নেতাদের কপালে।
তবে এমনটা যে হতে পারে, তা কিন্তু দলীয় নেতৃত্বের একাংশ আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। তাঁদের কথায়, ‘‘বসিরহাট দক্ষিণের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। তখন থেকে যদি দল মানুষের পাশে থাকত, আন্দোলনমুখী হত, তা হলে হয় তো পুরসভায় এমন ফল দেখতে হত না।
প্রচারের কৌশল বদলে বামেরা এ বার বড় মিছিল কিংবা সভার বদলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারে জোর দিয়েছিল। বেশ কিছু নতুন মুখ সামিল করা হয়েছিল প্রার্থী তালিকায়। কিন্তু তা-ও যে বিশেষ কাজে আসেনি, ভোটের ফলই বলছে সে কথা। বামেদের একাংশের দাবি, বড় মিছিল করা কিংবা বড় নেতাদের প্রচারে তেমন ভাবে দেখতে না পাওয়াটা হিতে বিপরীত হয়েছে। এমন একটি দলকে ক্ষমতায় দেখতে চাননি সাধারণ মানুষ।
বসিরহাটের তিনটি পুরসভার ফলাফলের কারণ খুঁজতে গিয়ে এক বাম নেতা বলেন, ‘‘বসিরহাট মহকুমার তিনটি পুরনির্বাচন হয়ে গেল। অথচ দলের প্রথম সারির প্রায় কোনও নেতাই এলেন না। এটা যেমন দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উপরে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, তেমনই সাধারণ ভোটারদের বিভ্রান্ত হতে হয়েছে। বহিরাগতরা তৃণমূলের হয়ে ছাপ্পা মেরেছে বলে অভিযোগ করলেও বাম নেতৃত্বের একাংশের দাবি, আগের মতো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাস্তায় না নামায় বামফ্রন্টের শক্তি নিয়েও মানুষের মধ্যে সংশয় দেখা গিয়েছে।
বসিরহাট এবং বাদুড়িয়ায় তৃণমূল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় তাদের পুরবোর্ড গড়া কেবল সময়ের অপেক্ষা। তবে টাকিতে তৃণমূল ৮টি এবং বাম-বিজেপি মিলে ৮টি আসনে জয়ী হওয়ায় ত্রিশঙ্কু অবস্থা। তা হলে কী এখানে বামেরা বিজেপিকে সমর্থন করা কিংবা সমর্থন নেওয়ার কথা ভাববে?
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা টাকির বাসিন্দা শ্রীদীপ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘বিজেপিকে সমর্থন করা কিংবা সমর্থন নেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। এক দিকে তৃণমূলের লোকজন বহিরাগতদের নিয়ে এসে সন্ত্রাস, ছাপ্পা ভোট করল। অন্য দিকে, কয়েকটি ওয়ার্ডে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা আমাদের ভাল ফলের থেকে বঞ্চিত করল। আরও অন্তত ৫টি আসনে দলীয় প্রার্থীরা জয়ী হবেন বলে আশা করা হয়েছিল।’’
তবে পূরানো কথা মনে না রেখে আগামী ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফলের আশায় যে ক’টি ওয়ার্ডে প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন, তাঁদের নিয়েই এখন নাগরিকদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলছেন সিপিএম নেতারা।