স্বচ্ছ্বতার বার্তা নাগরিক সভায়। ঘোষণা করা হচ্ছে বাম প্রার্থীদের নাম। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
নাগরিক সভা ডেকে বামেদের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হল বনগাঁ পুরসভা ভোটের প্রার্থী-তালিকা। নাম ঘোষণার পাশাপাশি প্রার্থীদের বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশাও জানিয়ে দেওয়া হয়। প্রার্থী-তালিকায় নবীন মুখ এবং মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা বাড়িয়ে এমনিতেই নতুন রণকৌশল নিয়েছে বামেরা। প্রার্থীদের সম্পর্কে ব্যক্তিগত তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে জানানো বাধ্যতামূলক। কিন্তু নাগরিক কমিটি ডেকে সেই সব তথ্য জানানোর মধ্যে বাড়তি স্বচ্ছ্বতার বার্তা দিতে চাওয়ার তাগিদ আছে বলেই মনে করা হচ্ছে। অতীতে এমন নিদর্শন দেখেননি বনগাঁ শহরের মানুষ।
রবিবার বনগাঁ হাইস্কুলে বামদের প্রার্থী-তালিকা প্রকাশ করার জন্য নাগরিক সভা ডাকা হয়েছিল। সেখানেই পুরসভার ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টি ওয়ার্ডে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। নাগরিক সভা ডেকে কেন প্রার্থী-তালিকা প্রকাশ করা হল? সিপিএমের বনগাঁ-বাগদা জোনাল কমিটির সম্পাদক তথা বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, “নাগরিক সভা থেকে প্রার্থী ঘোষণা করার কারণ, আমরা বৃহত্তর মানুষকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে চেয়েছিলাম।” প্রার্থীর বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশা ঘোষণার কারণ নিয়ে পঙ্কজবাবু বলেন, “বামদের পক্ষ থেকে কারা প্রার্থী হলেন, তাঁদের বিষয়ে আমরা কোনও তথ্য গোপন রাখতে চাই না। সব কিছু মানুষকে জানাতে চাই। কারণ, মানুষই সব বিচার করবেন।”
নাগরিক সভায় উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রণজিত্ মিত্র, ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী, সিপিআইয়ের বনগাঁ লোকাল কমিটির সম্পাদক অমল সাধু, সিপিএমের প্রাক্তন জেলা কমিটির সদস্য দুলাল মণ্ডল। এ দিনের নাগরিক সভায় কয়েকশো মানুষ উপস্থিত ছিলেন। বাম কর্মী-সমর্থক ছাড়াও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিও চোখে পড়েছে।
সভায় আসা এক মহিলা বললেন, “সাধারণত সিপিএমের ওই ধরনের সভায় যাওয়ার সুযোগ মেলে না। কিন্তু এ বার দেখলাম, ওয়ার্ড থেকে সাধারণ মানুষও যাচ্ছেন। তাই আমি চলে এলাম।”
বনগাঁ পুরসভার আসন সংখ্যা ২২টি। এ দিন ঘোষণা করা হয়েছে ২১ জন প্রার্থীর নাম। ১২ নম্বর ওয়ার্ডটিতে প্রার্থী দেবে ফরওয়ার্ড ব্লক। তারা এখনও নাম চূড়ান্ত করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন রণজিত্বাবু। তিনি বলেন, “এ দিন ১২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করা হলেও মঙ্গলবার ২২ জন বাম প্রার্থীই মনোনয়ন জমা দেবেন।” ওই ওয়ার্ডে প্রার্থীর বিষয়ে মৃত্যুঞ্জয়বাবু বলেন, “আমরা চাইছি ওয়ার্ড থেকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রার্থীর নাম উঠে আসুক। আমরা দলীয় ভাবে কারও নাম চাপিয়ে দিতে চাইছি না। সে কারণেই দেরি হচ্ছে।” তবে জেলা ফব সূত্রের খবর, দল এখন দলীয় কোন্দলে জেরবার। সে কারণেই তফসিলি মহিলা সংরক্ষিত আসনটিতে প্রার্থী বাছাই নিয়ে সময় সময় লাগছে।”
২০১০ সালের পুর নির্বাচনে ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে সিপিএম পেয়েছিল ১০টি ওয়ার্ড। তারা তৃণমূল পেয়েছিল ৬টি, কংগ্রেস ৫টি এবং নির্দল পেয়েছিল ১টি আসন। নির্দল ও কংগ্রেসের সমর্থনে পুরবোর্ড গঠন করেছিল তৃণমূল। একক বৃহত্তম দল হলেও সিপিএম বোর্ড গঠনের দাবি করেনি। যে দশ জন সিপিএম প্রার্থী জয়ী হয়ে কাউন্সিলর হয়েছিলেন, সেই ওয়ার্ডগুলি হল ১, ২, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১৩, ১৯ ও ২০। গতবার যাঁরা কাউন্সিলর ছিলেন, তাঁদের মধ্যে এ বার মাত্র দু’জনকে প্রার্থী করেছে সিপিএম। এঁরা হলেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের চন্দনা সাহা ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তাপস মুখোপাধ্যায়। বাকি আট জন কাউন্সিলর সকলেই যে সংরক্ষণের জন্য দাঁড়াতে পারেননি এমনটা নয়। যেমন ১ নম্বরের সিপিএম কাউন্সিলর অনিন্দিতা সাহা। তাঁর ওয়ার্ডটি এ বার সাধারণ আছে। কিন্তু তাঁকে সরিয়ে দল প্রার্থী করেছে শক্তিপদ বিশ্বাসকে। এ বিষয়ে স্কুল শিক্ষিকা অনিন্দিতাদেবী বলেন, “দলের পক্ষ থেকে আমাকে প্রার্থী হওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আমি চাই নতুন মুখ আসুক। সে কারণেই দাঁড়াতে চাইনি।” দলীয় সূত্রের খবর, সিপিএমের পক্ষ থেকে অনিন্দিতার স্বামী স্কুলশিক্ষক পীযূষ সাহাকেও প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল দলের পক্ষ থেকে। কিন্তু তিনিও শারীরিক অসুস্থতার কারণে দাঁড়াতে চাননি।
সিপিএমের উল্লেখযোগ্য কাউন্সিলরদের মধ্যে যাঁরা প্রার্থী হতে পারেননি, তাঁদের মধ্যে আছেন পুরসভার বিরোধী দলনেতা সুনীল সরকার। তিনি ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দাঁড়িয়ে জয়লাভ করেছিলেন। ওয়ার্ডটি এ বার তপসিলি সাধারণ হিসাবে সংরক্ষিত হয়েছে।
আট জন কাউন্সিলের মধ্যে মাত্র দু’জন টিকিট পেলেন কেন? রণজিত্বাবু বলেন, “ওয়ার্ড সংরক্ষণ, শারীরিক কারণ ও ওয়ার্ডের অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার কারণেই দু’জনের বেশি কাউন্সিলরকে এ বার প্রার্থী করা যায়নি।” ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে সিপিআই লড়ছে ৩টি ওয়ার্ডে। ওয়ার্ডগুলি হল ১৫, ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড। ১৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সিপিআইয়ের হেভিওয়েটপ্রার্থী প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিআইয়ের প্রার্থী টিঙ্কু ঘোষ।
তিনটি ওয়ার্ডে বামেরা কোনও প্রার্থী দেয়নি। ওয়ার্ডগুলি হল ৩, ৪ ও ১০ নম্বর। সেখানে নির্দল প্রার্থীকে বামেরা সমর্থন করেছেন। প্রার্থীদের মধ্যে সব থেকে কম বয়সের হয়েছেন ২১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রসেনজিত্ ভৌমিক। তাঁর বয়স মাত্র ২৫ বছর। প্রবীণতম প্রার্থী হলেন রণজিত্ মণ্ডল। তাঁর বয়স ৬৬। তিনি ১৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দাঁড়িয়েছেন। প্রার্থীদের মধ্যে আছেন গৃহবধূ, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, বেকার যুবক, শিক্ষক, মিস্ত্রি, প্যারাটিচার। শিক্ষাগত যোগ্যতার মধ্যে রয়েছে পঞ্চম শ্রেণি, সপ্তম শ্রেণি থেকে শুরু করে বিএ ও এমএ। মঙ্গলবার বামেরা মনোনয়নপত্র জমা দেবেন মহকুমাশাসকের দফতরে।